ময়দানে কাঁটা/১

মাঠে জল, অনুশীলন গলিতেই

স্টেডিয়ামের সংস্কার হয় না। ভাল নয় অন্য নানা মাঠের হালও। কাটোয়া শহরে খেলাধুলোর ভাল জায়গার অভাব রীতিমতো। স্কুলের মাঠ নিয়েও সমস্যা থাকায় খেলার উপযুক্ত জায়গা পায় না পড়ুয়ারা। ছবিটা বদলাতে কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে কি না, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।সিমেন্ট খসে গিয়ে ইট, শিক বেরিয়ে পড়েছে। হাঁটাচলা করা দায়। মাঠে বড়-বড় ঘাসের ফাঁকে বছরভর জল জমে থাকে। সেখানে গরু চরে বেড়ায়। এই হাল কাটোয়া স্টেডিয়ামের।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪৯
Share:

গ্যালারি ভাঙা, কাটোয়া স্টেডিয়ামে। নিজস্ব চিত্র

সিমেন্ট খসে গিয়ে ইট, শিক বেরিয়ে পড়েছে। হাঁটাচলা করা দায়। মাঠে বড়-বড় ঘাসের ফাঁকে বছরভর জল জমে থাকে। সেখানে গরু চরে বেড়ায়।

Advertisement

এই হাল কাটোয়া স্টেডিয়ামের। শহরের খেলাধুলোর অন্যতম প্রধান জায়গা এই স্টেডিয়াম এমন ভাবে পড়ে রয়েছে প্রায় সতেরো বছর ধরে। শুধু কাটোয়া স্টেডিয়াম নয়, শহরের অন্য নানা মাঠেরও পরিকাঠামো বেহাল। খেলার উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় বড় কোনও প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যায় না বলে অভিযোগ ক্রীড়াপ্রেমীদের।

এখন কাটোয়া পুরসভা এলাকায় খেলার মাঠ কার্যত একটি, টিএসি ময়দান। গত বছর নভেম্বরে টাউন অ্যাথলেটিক ক্লাবের ২০ বিঘার মাঠটি পুরসভাকে হস্তান্তর করা হয়। কাটোয়ার কাশীগঞ্জপাড়ার এই মাঠটি এক সময়ে ওই ক্লাবের নামে দান করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা গোবিন্দরাম চট্টোপাধ্যায়। হস্তান্তরের পরে সেপ্টেম্বরে এই মাঠে আয়োজিত হয় ১৪ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী হরিশচন্দ্র শিল্ড টুর্নামেন্ট। সে জন্য কিছু পরিকাঠামো সংস্কার করে পুরসভা। কিন্তু শহরের ক্রীড়াপ্রেমীদের দাবি, শিল্ড শুরুর আগে মাঠে বালি দেওয়ায় সেখানে খেলতে সমস্যা হয়। মাঠটি নিচু হওয়ায় বৃষ্টিতে জল জমার আশঙ্কাও রয়েছে। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক রণজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সম্প্রতি এই মাঠে একই তারিখে রাঙামাটি স্পোর্টস ও মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার খেলা পড়েছিল। তাতে সব খেলোয়াড়দেরই অসুবিধা হয়।’’

Advertisement

আঠাশ বছর আগে উদ্বোধন হয়েছিল কাটোয়া স্টেডিয়ামের। ৫৬ বিঘা জায়গা নিয়ে তৈরি স্টেডিয়ামে হাজারখানেক দর্শকের বসার গ্যালারি তৈরি হয়। খেলোয়াড়দের পোশাক পরিবর্তন ও খেলাধুলার সামগ্রী রাখার জন্য তিনটি ঘর, পাঁচটি শৌচাগারও তৈরি হয়। আগে নানা প্রতিযোগিতা আয়োজিত হলেও সতেরো বছর ধরে ভগ্ন দশা স্টেডিয়ামের। মাঠে ঢোকার মুখে দরজা ভেঙে তাতে মরচে পড়েছে। ভেঙে গিয়েছে ঘর ও শৌচাগারগুলি। গ্যালারির বিভিন্ন জায়গা ভাঙা। মাঠ নিচু হওয়ায় জল, আবর্জনায় ভরে থাকে। বছর সাতেক সেখানে খেলাধুলোই বন্ধ।

মহকুমা কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিবশঙ্কর মাইতি বলেন, ‘‘সপ্তাহে তিন দিন ৭০ জনকে গলিতে কবাডি অনুশীলন করানো হয়। তাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতে সমস্যা হয়। প্রশস্ত মাঠ না পাওয়ায় খেলাধুলোয় খুব অসুবিধা হয়।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি মাঠটি সংস্কারে হাত দিয়েছে ক্রীড়া দফতর। সম্প্রতি পরিদর্শনে এসেছিলেন ওই দফতরের আধিকারিক সৈয়দ আহমেদ বাবা।

পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, ১২৩ মিটার চওড়া ও ১৭৩ মিটার লম্বা এই স্টেডিয়ামের মাঠটি উঁচু করার পাশাপাশি স্প্রিংলার বসানো হবে। মেক্সিকান ঘাস লাগানো, গ্যালারি ও মাল্টিজিম তৈরি, ড্রেসিংরুম, শৌচাগার গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্ত দফতরের কাটোয়া ডিভিশনের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার তমাল রায় বলেন, ‘‘পূর্ত দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে ৯ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়ছে। ক্রীড়া দফতরের অনুমোদন পেলেই মাসখানেকের মধ্যে দরপত্র ডাকা হবে।’’ পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘‘পুরসভার মাঠে হাজার দেড়েক দর্শকের বসার উপযুক্ত গালারি ও মাঠ সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। সে জন্য প্রাথমিক ভবে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন।’’

শুধু বড় প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাঠ নয়, সমস্যা রয়েছে শহরের কচিকাঁচাদের খেলার জায়গা নিয়েও।

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement