সিএনজি-র অভােব সমস্যা অটো নিয়ে

হাজারের উপর অটোর ভরসা মাত্র দু’টি সিএনজি গ্যাস ভরার স্টেশন। এমনিতেই সারা দিন গ্যাস নেওয়ার জন্য লাইন লেগে থাকে। তার উপরে জাতীয় সড়কের ভিড়িঙ্গি মোড়ে সপ্তাহ খানেক আগে গ্যাস সিলিন্ডার বহনকারী ট্রাকের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যুর জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সিএনজি আনা-নেওয়া। বিপাকে পড়েছেন অটোচালকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৬
Share:

অটোর জন্য অপেক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।

হাজারের উপর অটোর ভরসা মাত্র দু’টি সিএনজি গ্যাস ভরার স্টেশন। এমনিতেই সারা দিন গ্যাস নেওয়ার জন্য লাইন লেগে থাকে। তার উপরে জাতীয় সড়কের ভিড়িঙ্গি মোড়ে সপ্তাহ খানেক আগে গ্যাস সিলিন্ডার বহনকারী ট্রাকের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যুর জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সিএনজি আনা-নেওয়া। বিপাকে পড়েছেন অটোচালকেরা। যাত্রীদের অভিযোগ, অধিকাংশ অটো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেগুলি চলছে সেগুলি চড়া ভাড়া হাঁকছে বলে অভিযোগ। অটোচালকদের দাবি, পেট্রোলে অটো চলছে। তাই পুরনো ভাড়ায় পোষাচ্ছে না।

Advertisement

সিএনজি চালিত অটো প্রথম দুর্গাপুরে চালু হয় ২০০৮ সালে। অটো ছিল মাত্র ৮০টি। গ্যাস ভরার জন্য দু’টি স্টেশন চালু করা হয় সিটি সেন্টার এবং মেনগেট এলাকার দু’টি পেট্রোল পাম্পে। এখন অটোর সংখ্যা হাজারেরও বেশি। তাছাড়া সিএনজি চালিত অন্য যানবাহনের সংখ্যাও শ’পাঁচেক। বরাকর ও বার্নপুরের দামোদর উপত্যকায় কুয়ো খুঁড়ে কোল বেড মিথেন (সিবিএম) উত্তোলন করে তা সিএনজিতে রূপান্তর করে দুর্গাপুরে সরবরাহ করে একটি বেসরকারি গ্যাস সংস্থা। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পেট্রোল পাম্পে ‘ফিলিং পয়েন্ট’ খুলে ট্যাঙ্কে করে সিএনজি সরবরাহ করে সংস্থাটি। বিনিময়ে ওই তেল সংস্থা এবং পেট্রোল পাম্পের মালিক নির্দিষ্ট হারে ‘কমিশন’ পান।

শহরের বিপুল সংখ্যক অটো ও গাড়ি সিএনজি নেওয়ার জন্য দু’টি পেট্রোল পাম্পে প্রায় দিনভর ভিড় করে থাকে। তার উপরে সপ্তাহখানেক আগে থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় ভিড়িঙ্গি মোড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে গ্যাস সিলিন্ডারবাহী একটি গাড়ির ধাক্কায় মারা যান এক যুবক। সেটি পাশের একটি টিনের ছাউনিতেও ধাক্কা মারে। এর পরেই মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে মৃতদেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধ শুরু হয়। ট্রাক মালিক না এলে দেহ তোলা যাবে না বলে পুলিশকে জানিয়ে দেন অবরোধকারীরা। পরে অবশ্য পুলিশ তাঁদের হঠিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তার পর থেকেই গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্রাক চলাচল থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এর রীতিমতো প্রভাব পড়েছে সিএনজি সরবরাহে।

Advertisement

যাত্রীরা অভিযোগ করেন, সিটি সেন্টার, দুর্গাপুর স্টেশন, মুচিপাড়া প্রভৃতি স্ট্যান্ডের অধিকাংশ অটোই রুটে চলছে না। এর ফলে যাতায়াতে প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে। আবার যে অটোগুলি চলছে তারা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে। ফলে, দু’দিক থেকেই সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। ভাড়া বেড়েছে ‘রিজার্ভ’ অটোর ক্ষেত্রেও। সিটি সেন্টার স্ট্যান্ডে অপেক্ষারত যাত্রী নরোত্তম বসু, পিয়ালি বসুরা বলেন, “নিয়মিত অটোতে যাতায়াত করি। কিন্তু কয়েক দিন খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” অটোচালকরা অবশ্য দাবি করেন, সিএনজি না থাকায় তাঁরা বাধ্য হয়ে পেট্রোল দিয়ে অটো চালাচ্ছেন। এর ফলে খরচ বেড়ে গিয়েছে। যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত অটো চালকদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর সিএনজি অপারেটরস ইউনিয়ন’-এর সহ সভাপতি শান্তনু সোম বলেন, “সিএনজি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

সিএনজি ভরার স্টেশন দু’টিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, মেন গেট এলাকার পাম্পটিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সিএনজি সরবরাহ অনিয়মিত ভাবে শুরু হয়েছে। তবে তা পরিমাণে অপ্রতুল। ফলে বাকবিতণ্ডা লেগেই থাকছে। অনেকেই সিএনজি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সিটি সেন্টারের স্টেশনটিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্যাসের গাড়ি ঢুকেছে বলে জানা গিয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ চালু না হলে এমন সমস্যা ফের হতে পারে। তাছাড়া আরও ফিলিং স্টেশনও জরুরি।” বেসরকারি গ্যাস সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে অন্তত আর একটি স্টেশন খোলার কথা ভাবা হয়েছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে সিএনজি সরবরাহের জন্য পাইপ পাতাও শুরু হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement