দুর্ঘটনাগ্রস্ত খণ্ডঘোষ থানার গাড়ি।
ট্রাকের সঙ্গে পুলিশের গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কায় মৃত্যু হল খণ্ডঘোষ থানার এক এএসআইয়ের। শনিবার ভোরে মাধবডিহিতে বর্ধমান-আরামবাগ রাস্তায় এই দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন ওই থানার ওসি সুদীপ দাস-সহ পাঁচ জন। তাঁদের বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে ওসি এবং এক পুলিশকর্মীকে আশঙ্কজনক অবস্থায় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মৃত এএসআই বাসুদেব চক্রবর্তী (৫৫) মাস ছয়েক আগে মাধবডিহি থানা থেকে খণ্ডঘোষে বদলি হয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি হুগলির আরামবাগের সালালপুর গ্রামে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে পুলিশ লাইনে তাঁকে সম্মান জানান বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল-সহ অন্য আধিকারিকরা। পুলিশ সুপার বলেন, “তল্লাশি চালিয়ে ফেরার সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। টায়ার ফেটে যাওয়ায় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুলিশের গাড়িতে ধাক্কা মারে।” পুলিশ জানায়, ওসি ছাড়া অন্য আহতেরা হলেন মহম্মদ ফইজুল আমিন, মহিলা পুলিশ কর্মী সুদামা উকিল, চালক রফিক শেখ ও ভিলেজ পুলিশ দুর্যোধন বজর।
দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনা হল ওসি সুদীপ দাসকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলির আরামবাগ থেকে তল্লাশি চালিয়ে থানায় ফিরছিল খণ্ডঘোষের পুলিশের ওই গাড়িটি। মাধবডিহির বুলচাঁদ গ্রামের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মাধবডিহি থানার পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে বর্ধমানে পাঠায়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশকর্মীদের পরিজনেরা হাসপাতালে চলে আসেন। তাঁদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর মধ্যে ওসি সুদীপবাবুকে দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান পরিজনেরা। কিন্তু নানা বাহানায় তাঁকে স্থানান্তরের ব্যাপারে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাফিলতি করছেন বলে অভিযোগ তোলেন পরিবারের লোকজন। তাঁদের দাবি, জেলা পুলিশ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। তা সত্ত্বেও গুরুতর জখমদের স্থানান্তরের ব্যাপারে গড়িমসি করা হচ্ছিল। পরে পুলিশকর্তাদের হস্তক্ষেপে অবশ্য বিষয়টি মিটে যায়। তবে সুদীপবাবুর এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘পুলিশকর্মীদের ক্ষেত্রেই এই অবস্থা। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে কী হয় বোঝাই যাচ্ছে!” যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, একটু ভুল বোঝাবুঝি ঘটেছিল। তা সঙ্গে-সঙ্গে মিটে গিয়েছে।
মৃত বাসুদেবাবু সহকর্মীরা এ দিন হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “প্রচণ্ড যাত্রাপাগল মানুষ ছিলেন উনি। রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাত্রার সংলাপ বলতেন। এমনও হয়েছে, তল্লাশিতে যাচ্ছি, তার মধ্যেই উনি একের পর এক যাত্রার সংলাপ বলে যাচ্ছেন।” পরিবার ও সহকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, বাসুদেববাবু নিজেও অনেক যাত্রা ও নাটকে অভিনয় করেছেন। বিভিন্ন গ্রামের অনুষ্ঠানে গান গাইতে যেতেন তিনি। তাঁর পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী ও তিন মেয়ে।
শনিবার ছবিগুলি তুলেছেন উদিত সিংহ ও বিকাশ মশান।