অনুব্রত মণ্ডল এবং জিতেন্দ্র তিওয়ারি। — ফাইল চিত্র।
এক দিকে, গরু পাচার মামলায় ধৃত বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (কেষ্ট) শুনানি হল না আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে। অন্য দিকে, কয়লা চুরির মামলায় সিআইডি তদন্তে আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এই মামলাতেই জিতেন্দ্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল সিআইডি। আদালতের এই নির্দেশে তিনি স্বস্তি পেলেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এ দিনই আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে সিবিআই দাবি করে, গরু পাচারে অভিযুক্ত অনুব্রতের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন ও এনামুল হক ভুয়ো সংস্থা তৈরি করেন। সেগুলির অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চলত লেনদেনও।
আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লি হাই কোর্টে অনুব্রতের জামিনের আর্জির শুনানি চার মাস পিছিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই এ দিন আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে অনুব্রতের মামলার শুনানি ছিল। তবে দিল্লি হাই কোর্টে শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায়, এ দিন আসানসোলের আদালতে আসেননি অনুব্রতের আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ। ফলে, সেখানে এ দিন শুনানি হয়নি। বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন২৭ এপ্রিল।
এ দিন সেহগালকেও আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করানোর দিন ছিল। কিন্তু তিহাড় জেলে থাকা সেহগালকে এ দিন নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য হাজির করানো যায়নি। তবে তাঁর আইনজীবী শেখর কুন্ডু বিচারকের কাছে জানতে চান, সেহগালের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা সোনার গয়নাগুলি কবে ফেরত মিলবে। বিচারক সিবিআইয়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তদন্তকারী অফিসার দাবি করেন, বেশ কিছু সংখ্যক বেনামি বিল পাওয়া গিয়েছে। সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। পরের শুনানিতে এ বিষয়ে বিশদে জানানো হবে।
সেহগাল এবং এনামুল হকের ব্যাঙ্ক লেনদেন সংক্রান্ত কিছু তথ্য এ দিন বিচারকের কাছে জমা দেয় সিবিআই। আদালতে তদন্তকারী সংস্থা দাবি করে, ওই দু’জনই বেশ কিছু ভুয়ো বাণিজ্য সংস্থা তৈরি করেন। গরু পাচারের টাকা প্রথমে ওই সংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতেন এনামুল। পরে সেই সংস্থা থেকে সেহগালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হত। এ দিন সেহগাল ও এনামুলের দু’টি অ্যাকাউন্টের তথ্য বিচারকের কাছে জমা দেওয়া হয়।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, নিমচা ফাঁড়িতে দায়ের হওয়া কয়লা চুরির তদন্তে নেমে গত ২৮ মার্চ জিতেন্দ্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সিআইডি। সে মর্মে ওই দিন আসানসোলের এসিজেএম আদালতের কাছে আবেদনও করে সিআইডি। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে গিয়েছিলেন জিতেন্দ্রের আইনজীবী। এ দিন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সিআইডি তদন্তের উপরে আপাতত স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেন।
কম্বল বিতরণে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর মামলায় ধৃত জিতেন্দ্রকে বৃহস্পতিবার কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিজেপির জেলা মুখপাত্র বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “গরু, কয়লা পাচারের সঙ্গে তৃণমূল নেতারা যে যুক্ত, তা প্রতিদিন বোঝা যাচ্ছে। আর এ দিকে, আমাদের নেতাদের হয়রান করার চেষ্টা করছে তৃণমূল ও রাজ্য সরকার, সেটাও আদালতের নির্দেশের পরে ফের বোঝা যাচ্ছে।” যদিও অভিযোগে আমল না দিয়ে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের বক্তব্য, “আইন আইনের পথে চলছে। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না। আদালতের রায় সব সময় মেনে চলতেবাধ্য আমরা।”