—প্রতীকী চিত্র।
বয়স ৭৩। সোজা হয়ে হাঁটাচলা করতে পারেন না। বুধবার ওই অবস্থাতেই নাতির হাত ধরে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের মন্তেশ্বরের উত্তরপাড়া থেকে কালনা মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে এসেছিলেন বৃদ্ধা ঝুমারানি চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, বড় ছেলে এবং বৌমার অত্যাচারে বাড়িতে থাকতে পারছেন না তিনি।
দু’পাতার চিঠিতে মহকুমাশাসককে তিনি জানিয়েছেন, স্বামী রাজকুমার চক্রবর্তী ন’বছর আগে মারা গিয়েছেন। তার পর থেকেই বড় ছেলে তপন চক্রবর্তী এবং বৌমা ফুলি চক্রবর্তী অত্যাচার শুরু করে। স্বামীকেও তাঁরা মারধর করতেন বলে অভিযোগ। ছোট ছেলে ও নাতিরা আটকাতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বৃদ্ধার দাবি, স্বামীর তৈরি দ্বিতল বাড়ি থেকে মারধর করে বার করে দিয়েছে ছেলে-বৌমা। কয়েক মাস আগে থেকে বামুনিয়া বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে ছোট ছেলেকে নিয়ে ভাড়া থাকতে শুরু করেন তিনি। সেখানে আরও একটি ছোট বাড়ি রয়েছে তাঁদের। অভিযোগ, ছোট ছেলের পরিবার নিয়ে সেখানে থাকা শুরু করলে ফের মারধর শুরু করে বড় ছেলে। বৃদ্ধার দাবি, ‘‘বড় ছেলে, বৌমা কোনও দিনই আমায় খেতে দেয়নি। স্বামী বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী ছিলেন। তাঁর পেনশনের টাকায় আমার দিন চলে।’’
বড় ছেলের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে কোন মা চায়! কিন্তু মারধর আর সহ্য করতে পারি না। বড্ড কষ্ট হয়। বড় বৌমা গালিগালাজ করে। প্রতিবাদ করে কেউ আমার পাশে দাঁড়ালে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়। আমি চাই স্বামীর বাড়িতে যেন শান্তিতে থাকতে পারি।’’ তাঁর দাবি, পেনশনের টাকা থেকে দুই ছেলেকে তিন হাজার করে টাকা দেন তিনি। বাকি টাকায় তাঁর থাকা, খাওয়া, ওষুধের খরচ চলে।
অভিযুক্ত তপনকে ফোন করা হলে অশালীন শব্দ প্রয়োগ করে স্ত্রীকে ফোন ধরিয়ে দেন তিনি। ফুলি বলেন, ‘‘আমি বাগদি পরিবারের মেয়ে। ছেলে বাগদি পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে ওঁকে দেখতে পারে না। উনি আমাদের সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছেন। সব অভিযোগ মিথ্যা।’’
বৃদ্ধার সঙ্গে আসা নাতি অংশুমান চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘আমি ভিন্ রাজ্যে কাজ করি। জেঠু, জেঠিমা শুধু ঠাকুমাকেই নয়।বাবা, মা-সহ পরিবারের অন্যদের উপেরও অত্যাচার চালায়। বাধ্য হয়েই অভিযোগ জানাতে এসেছি।’’ বৃদ্ধার আইনজীবী সিদ্ধার্থশঙ্কর মণ্ডল জানিয়েছেন, মায়ের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে ছেলে। মহকুমাশাসক ছাড়াও পুলিশ সুপার এবং মন্তেশ্বর থানায় চিঠি দেওয়া হয়ছে। কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল জানিয়েছেন, অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।