জেলাশাসকের দফতরে সর্বদল বৈঠক।
গ্রামে ঘোরাফেরা করছে মোটরবাইক বাহিনী। জটলা পাকানো হচ্ছে ব্লক অফিসের সামনে। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হতেই বিরোধীদের আটকাতে এই পন্থা নেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। তবে এ সব উপেক্ষা করেই তাঁরা পঞ্চায়েত ভোটে লড়বেন বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলের নেতারা।
সোমবার জেলাশাসকের দফতরে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সর্বদল বৈঠকে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দার রেজ্জাক মণ্ডল অভিযোগ করেন, বর্ধমান শহরের কাছেই কামনাড়ায় ব্লক দফতর থেকে কেতুগ্রাম, কাটোয়া, মঙ্গলকোট, রায়না, খণ্ডঘোষ, আউশগ্রামের বিভিন্ন ব্লকে সকাল থেকে শ’দুয়েক করে লোক জমায়েত করে রেখেছে তৃণমূল। এমনকী গ্রামে-গ্রামে মোটরবাইক বাহিনীর ‘দাপট’ শুরু হয়ে গিয়েছে। রেজ্জাকের অভিযোগ, “বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে বা সর্বদল বৈঠকে যেতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।”
সিপিএমের অভিযোগ, এ দিন দুপুরে কেতুগ্রাম ২ ব্লক অফিসে সর্বদল বৈঠকে যান ডিওয়াইএফ কর্মী নির্মাল্য চট্টোপাধ্যায় ও সীতাহাটির বাম কর্মী পুলক বন্দোপাধ্যায়। অফিসেই নির্মাল্যবাবুকে আটকে এক দল দুষ্কৃতী শাসায়। পুলকবাবুকে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছে সিপিএম। দলের জেলা কমিটির সদস্য তমাল মাঝির অভিযোগ, ‘‘কেতুগ্রাম ১ ব্লকেও সর্বদল বৈঠকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে আমাদের লোকজনকে। প্রার্থীদের এখন থেকেই নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। মহিলারা প্রার্থীরা কোন ভরসায় যাবেন?’’
মঙ্গলকোটেও ব্লক অফিসে ঢোকার আগে সিপিএমের জেলা কমটির সদস্য দুর্যোধন সরের গাড়িতে ইট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের ভয়ে বৈঠকেই যেতে পারলাম না।’’ কাটোয়া ১ ব্লক অফিসের বাইরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জমায়েত হওয়ায় মনোনয়ন তুলতে যাননি তাঁদের প্রার্থীরা, অভিযোগ কাটোয়ার সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের।
বিজেপি-র সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর বক্তব্য, “সকাল দেখেই বোঝা যায়, দিনটা কেমন যাবে। প্রথম দিন দলের কর্মীরা যা রিপোর্ট দিচ্ছেন, তা বেশ দুশ্চিন্তার। জেলা জুড়ে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছি।” তিনি অভিযোগ করেন, গলসিতে প্রশাসনের লোকজনই অসহযোগিতা করেছেন। আউশগ্রাম ১ ব্লকে তাঁদের লোকজনকে মারধর করা হয়েছে।
কামনাড়ায় ব্লক অফিসের বাইরে মোটরবাইক নিয়ে জটলা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
জেলা সিপিএম নেতারা অবশ্য প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। দলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদারের বক্তব্য, “মনোনয়ন পেশ করার দিন আমাদের কর্মী-সমর্থকদের হাতে ঝান্ডার সঙ্গে ডান্ডাও থাকবে। বোমা মেরেও তৃণমূল আমাদের হঠাতে পারবে না।” দলের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের কথায়, “পঞ্চায়েত স্তরে আমরা সব আসনেই প্রার্থী দেব। যেখানে পারব না, তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে অন্য কাউকে সমর্থন করব।” তাঁর দাবি, অত্যাচারের মুখে পড়তে হবে জেনেই দলের প্রতি আনুগত্য রেখে প্রার্থী হতে আসছেন নেতা-কর্মীরা।
তৃণমূল অবশ্য কোনও সন্ত্রাসের কথা মানতে চায়নি। বিদায়ী জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর কথায়, “বিরোধীদের সংগঠন নেই। তাদের সঙ্গে মানুষও নেই। কেউ প্রার্থী হতে চাইছে না। সে জন্য সন্ত্রাসের গল্প ফেঁদে বাজার গরম করতে চাইছে।”
জেলা প্রশাসন জানায়, জেলা পরিষদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া হবে মহকুমাশাসকের দফতরে। বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ মহকুমার প্রার্থীরা জেলা প্রশাসনের আরটিসি ভবনে তা করতে পারবেন। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানান, মহকুমা ও ব্লক প্রশাসনের অফিসে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। জেলায় ভোটার সংখ্যা ৩২,৯৬,১০৭ জন। পঞ্চায়েতে মোট আসন ৩২৩৪। পঞ্চায়েত সমিতির ৬১৮ ও জেলা পরিষদের আসন ৫৮।