ছবি: সংগৃহীত
সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি শেষ হয়নি, অথচ ঠিকাদার টাকা চেয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন— গুসকরা ফাঁড়িতে এমনই অভিযোগ দায়ের করেছেন ‘সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্পের এক উপভোক্তা। সুশীলার বাসিন্দা সুকান্ত লোহার নামে ওই ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তও শুরু করেছে পুলিশ।
বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরিতেও ঠিকাদার-রাজ জাঁকিয়ে বসেছে। এমনকি, বাড়ি তৈরির পরে যে ‘বিলাসবহুল’ ভাবে সাজানো হচ্ছে তাতে উপভোক্তা বাছাই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, শহরের ছ’নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি প্রকল্পে তৈরি একটি বাড়িতে বাতানুকূল যন্ত্র, মার্বেল বসানো হয়েছে। আবার ওই এলাকাতেই প্রকল্পে তৈরি অনেক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। আবার নেতাদের অনেক আত্মীয় আর্থিক সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও ওই প্রকল্পে বাড়ি পাচ্ছেন, অনেক উপভোক্তা সরকারি প্রকল্পের টাকায় ফাঁকা জমিতে বাড়ি না করে পুরনো বাড়ি দোতলা করছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ।
বিজেপি নেতা চঞ্চল গড়াইয়ের দাবি, “উপভোক্তা নির্বাচনেই গলদ রয়েছে। প্রকৃত গরিবরা বাড়ি পাননি সেটা বোঝা যাচ্ছে। আবার গরিব মানুষদের শোষণ করছে ঠিকাদার!” পুরসভার পূর্ত বিভাগের দায়িত্বে থাকা তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা পুরসভা ঘুমাচ্ছে। বেআইনি কাজ বাড়ছে।’’
শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড, সুশীলার বাসিন্দা সুকান্তবাবুর অভিযোগ, “২০১৮-১৯ সালে সরকারি প্রকল্পে একটি বাড়ি তৈরির জন্য টাকা পান তিনি। তার পরেই ‘কালো চাচা’ নামে এক ঠিকাদার গায়ের জোরে বাড়ি তৈরি শুরু করে দেন। দু’দফায় টাকাও নেয়। তার পরে তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ করে দেন। আমি নিজের খরচে বাড়ির বাকি কাজ করতে শুরু করি। এখন দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ব্যাঙ্কে ঢুকতেই ফোন করে ওই টাকা চাওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, বাড়ি তৈরির অগ্রগতি দেখে মোটামুটি চার দফায় ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা উপভোক্তাকে দেওয়া হয়। পুরসভার ঠিকাদারেরা নয়, উপভোক্তা নিজেই বাড়ি তৈরি করবেন, এটাই নিয়ম। কিন্তু শুধু ওই ব্যক্তি নন, কয়েকশো উপভোক্তার কাছে পুরসভার নাম করে গায়ের জোর দেখিয়ে ঠিকাদারেরা কাজ আদায় করেছে বলে অভিযোগ। যদিও ওই ঠিকাদারের ম্যানেজার পিনাকী ঘটকের দাবি, “পুরসভায় ওই উপভোক্তাকে আমাদের পাওনা মেটানোর জন্য ডেকেছিলাম। উনি রাজি হননি। আবার দেখাও করতে চাইছেন না। অথচ ওঁর কথাতেই আমরা বাড়ি তৈরি করেছি।’’ গুসকরা পুরসভার প্রশাসক তথা জেলার সিনিয়র ডেপুটি কালেক্টর অমিয়ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, “আমার কাছে সরাসরি কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে পুরসভাকে বিষয়গুলি নজরদারি করার জন্য বলব।’’