প্রতীকী ছবি
বছরখানেক আগে এলাকায় ‘বাংলা আবাস যোজনা’র ঘর দখল করে পার্টি অফিস করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ বার পূর্ব বর্ধমানের সেই জামালপুর থানার একটি গ্রামে ফের আবাস যোজনার ঘর দেওয়ার নামে একাধিক উপভোক্তার কাছ থেকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে। জামালপুরের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের শম্ভুপুর গ্রামের প্রায় ৩০ জন উপভোক্তার সই-সংবলিত অভিযোগের চিঠি ব্লক অফিসে সোমবার জমা পড়েছে।
গত বছর জামালপুরের কাঠুরিয়া গ্রামে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা জানতে পারেন, ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় ঘর পাওয়া বাসিন্দা শঙ্কর মাঝি ঘরে ঢুকতেই পারেননি। তাঁর প্রাপ্য ঘর ‘দখল’ করে তৃণমূল পার্টি অফিস তৈরি করে বলে অভিযোগ। ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ সেই ঘর শঙ্করবাবুকে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছিল। এ বার আবাস যোজনায় ‘কাটমানি’র অভিযোগ প্রসঙ্গে বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে তিনটি পর্যায়ে বাড়ি তৈরির জন্য এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। এ ছাড়া, বাড়ি তৈরির মজুরি বাবদ ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে ৯০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া হয়। উপভোক্তাদের অভিযোগ, প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার পরেই গ্রামের তিন তৃণমূল কর্মী ‘কাটমানি’ দেওয়ার জন্যে ‘চাপ’ দিতে থাকেন। কারও কাছে ২০ হাজার তো কারও কাছে ৫-১০ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়। তা না দিলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মিলবে না বলে ‘হুমকি’ও দেওয়া হয়। বিডিও-র কাছে জমা দেওয়া চিঠিতে উপভোক্তারা দাবি করেছেন, বাধ্য হয়ে তাঁরা ওই তিন জনের হাতে ‘কাটমানি’ তুলে দেন। এখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় বাড়ি তৈরির কাজ থমকে রয়েছে।
উপভোক্তা পরিবারের পদ্মা ক্ষেত্রপাল, ছায়া রুইদাস, অধর ক্ষেত্রপালদের অভিযোগ, ‘‘গায়ের জোর, হুমকির চোটে সরকারি প্রকল্পের টাকার একটা অংশ ব্যাঙ্ক থেকে তুলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দিতে হয়েছে। আবার পরের কিস্তির টাকা পেলে, পাঁচ হাজার টাকা করে চেয়ে গিয়েছে। হিসেব করলে দেখা যাবে, এক লাখ ২০ হাজারের মধ্যে ২০-২৫ হাজার টাকা কাটমানিই দিতে হচ্ছে। তা হলে বাড়ি করব কী ভাবে?’’ সুশান্ত রুইদাস নামে এক জনের অভিযোগ, ‘‘আমাদের পাড়ার ১৭ জন সরকারি প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন। প্রথম কিস্তি টাকা ঢোকার পরে, সব পরিবারকেই কাটমানি দিতে হয়েছে।’’ তাঁদের আরও অভিযোগ, ব্লক দফতরে অভিযোগ জানাতে যাওয়ায় গ্রামের এক জনকে মারধর করেছেন তৃণমূলের কর্মীরা।
অভিযুক্ত তিন তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে বুধবার বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তৃণমূলের একাংশের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী বারবার নির্দেশ দেওয়ার পরেও নিচুতলার কিছু কর্মীর ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভ্যাস বন্ধ করা যাচ্ছে না। যদিও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব এ দিন কিছু জানাতে পারেননি। দলের বেরুগ্রাম অঞ্চল সভাপতি আব্দুস সাদ্দামের বক্তব্য, “বিষয়টি শুনেছি। প্রশাসন তদন্ত করছে। আমরাও জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে কী করণীয়, তা জানব।’’ জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান বলেন, “কারা এ সব করছে, অভিযোগকারীদের কাছে তা জানতে চেয়েছি। জানার পরে, ওই গ্রামে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করব।’’
তবে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের টিপ্পনী, “কেউ কিছু করবে না। জল ছাড়া যেমন মাছ বাঁচে না, তেমনই কাটমানি ছাড়া, তৃণমূল থাকতে পারবে না।’’