কন্যাপুর শিল্পতালুকের রাস্তা। ছবি: শৈলেন সরকার।
রাস্তা ঢাকা পড়েছে জঙ্গলে। নিকাশির বন্দোবস্ত নেই। ভেঙে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। শিল্পক্ষেত্রের উন্নতির জন্য কমিটি গড়েছে রাজ্য। কিন্তু আসানসোল-দুর্গাপুরে নানা শিল্পতালুকের চিত্র এখন এমনই। হাল ফেরানোর জন্য নানা মহলে আর্জি জানিয়েছেন শিল্পপতিরা। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের বৈঠকেও জানিয়েছেন এ কথা। আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু কাজ কতটা হবে, সে নিয়ে সংশয় কাটেনি।
আসানসোলের কন্যাপুর শিল্পতালুক প্রায় তিন দশকের পুরনো। সেনর্যালে রোড লাগোয়া এই শিল্পতালুকটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন নিগম (এডিডিএ)। ১৯৮৬ সালে রাজ্যের তৎকালীন ভূমি দফতরের মন্ত্রী বিনয় চৌধুরী এর সূচনা করেন। প্রায় ৬০ একর জায়গায় তৈরি হয় তালুকটি। পরে অবশ্য সীমানা আরও বাড়ানো হয়েছে। এডিডিএ সূত্রে জানা যায়, শিল্পপতিদের ৬০ বছরের জন্য জমি লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে কারখানা গড়ার কাজ শুরু হয়। নানা বণিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, কমবেশি ৮০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থা এখানে কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু তার মধ্যে ৪০টিরও বেশি সংস্থা ঝাঁপ বন্ধ করে চলে গিয়েছে। শিল্পপতিদের অভিযোগ, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ শিল্পতালুকের পরিকাঠামো।
সেই অভিযোগ যে অমূলক নয়, তা শিল্পতালুকে গেলেই বোঝা যায়। ঢোকার মুখে মূল রাস্তায় বড় বড় গর্ত। আশপাশের ছোট রাস্তাগুলি আগাছায় ভরা। সংস্কার হয়নি মূল রাস্তার। কয়েক জন শিল্পপতি জানান, নিকাশি ব্যবস্থার কোনও বালাই নেই এখানে। শুরুতে নর্দমা তৈরি হয়ছিল। কিন্তু বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় সেই সব নর্দমা আবর্জনায় বুজে গিয়েছে। রাতে কোনও আলো জ্বলে না। বিদ্যুতের খুঁটি আছে, তারও রয়েছে। কিছু খুঁটিতে ভাঙা নিয়ন বাতি। আলো জ্বলে না। শিল্পতালুকের একটি সংস্থার মালিক তথা আসানসোল ইন্ডাস্ট্রিয়াল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি অধীর গুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের তাগিদে মাঝে-মাঝে বাতি লাগাই। কিন্তু সে সবও ভেঙে দায় দুষ্কৃতীরা।’’
নিরাপত্তারও বেশ অভাব রয়েছে বলে জানান অধীরবাবু। শিল্পতালুকের মাঝে অব্যবহৃত ফাঁকা জমিতে বেশ কিছু ঝুপরি গজিয়ে উঠেছে। দিনের বেলায় সেখানে শিল্পতালুকে কাজ করতে আসা শ্রমিক-কর্মীদের জন্য খাবার পাওয়া যায়। কিন্তু অন্ধকার নামার পরে কয়েকটিতে নানা অসামাজিক কাজকর্ম হয় বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদেরও আনাগোনা রয়েছে এখানে। প্রায় ২০ বছরের পুরনো একটি কৃষি সরঞ্জাম তৈরির কারখানার মালিক চন্দন পাল বলেন, ‘‘কিছু দিন পরপরই চুরি হচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।’’
শিল্পতালুকের পরিকাঠামোর উন্নতি চেয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিল্পপতিরা। দক্ষিণবঙ্গের ৯টি জেলার শিল্পপতিদের নিয়ে গঠিত ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর কার্যকরী সম্পাদক রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, ‘‘কত বার যে কন্যাপুর শিল্পতালুকটির উন্নয়ন নিয়ে বলেছি, তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু আমাদের কথা শুনছে কে!’’ মাস ছয়েক আগে আসানসোলে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিনও এ সব সমস্যা জানিয়েছিলেন শিল্পপতিরা। রাজেন্দ্রপ্রসাদবাবুর আশা, প্রশাসন এ বার নিশ্চয় কোনও পদক্ষেপ করবে। শিল্পতালুকের উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদী এলাকার একটি ইস্পাত কারখানার মালিক সুভাষ অগ্রবালও। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসক নিজে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। এ বার হয়তে সমস্যা মিটবে।’’
বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের আশ্বাস, সব ক’টি শিল্পতালুকেরই উন্নয়ন করা হবে। আশ্বাসই এখন ভরসা শিল্পপতিদের।