স্কুলভবনের বাইরে বসে রয়েছেন শিক্ষিকারা। নিজস্ব চিত্র
জেলার বিভিন্ন স্কুলেই ভয়েস রেকর্ডার-সহ ক্লোজড্ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে স্টাফ রুমে। বেশির ভাগ জায়গায় স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু বর্ধমান শহরের মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুলের কমন রুমে কেন সিসি ক্যামেরার সঙ্গে ভয়েস রেকর্ডার লাগানো হয়েছে তা নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ। প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দফতরে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। সেখান থেকে কোনও জবাব না আসায় সোমবার নিজেদের ঘরে না গিয়ে স্কুলের গাছ লায় বসে রইলেন তাঁরা। পঠনপাঠনে অবশ্য কোনও অসুবিধে হয়নি।
বর্ধমান শহরের মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল, মেমারির বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয় (ইউনিট ১), কাটোয়ার কাশীরাম দাস বিদ্যায়তন-সহ একাধিক স্কুলে ভয়েস রেকর্ডার-সহ সিসি ক্যামেরা রয়েছে। মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের বিশাখা কমিটি ও পকসো আইন অনুয়ায়ী প্রতিটি স্কুলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ রয়েছে। সেই মতো সরকারি স্কুলে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। অনেক স্কুল নিজেদের খরচেও ক্যামেরা লাগাচ্ছে। পরিচালন সমিতির অনুমোদন নিয়ে প্রথম দফায় ২২টি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুলও। যার বেশির ভাগটাই রয়েছে শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের বসার ঘরে। সেখানেই আপত্তি তাঁদের।
স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) কাছে পাঠানো ২১ জনের সই-সম্বলিত চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, ‘আমরা মনে করি ভয়েস রেকর্ডার লাগিয়ে আমাদের বাক্ স্বাধীনতায় হাত দেওয়া হচ্ছে, যা সংবিধান বিরোধী। অথচ ছাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে মিড-ডে মিলের জায়গাতে সিসিটিভি নেই’। আন্দোলনকারী এক শিক্ষিকা বলেন, “আমরা সিসি ক্যামেরার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু ভয়েস রেকর্ডার লাগানোর বিরুদ্ধে। এ ভাবে গোয়েন্দাগিরি করে পড়ুয়াদের কোনও লাভ হচ্ছে কি?” আর এক শিক্ষিকা রিনা মুর্মুর দাবি, “আমরা টিফিন বা ফাঁকা সময়ে বাড়িতে ফোনে কথা বলি। সহকর্মীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত কথাও বলি। সে সব শোনাও কি দরকার?” অনুপ দত্ত নামে এক শিক্ষাকর্মীর দাবি, “ভয়েস রেকর্ডার খোলা না হলে আমরা এখান থেকেই স্কুলের যাবতীয় কাজ করব।’’
তবে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী মল্লিক বলেন, “নিয়ম মেনেই ওই সিসি ক্যামেরা ও ভয়েস রেকর্ডার লাগানো হয়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক ও জেলাশাসক বিষয়টি জানেন। যাঁরা এখন ভয়েস রেকর্ডার নিয়ে আপত্তি তুলছেন, পরে সিসি ক্যামেরা নিয়েও আপত্তি তুলবেন। ওঁরা বোধহয় জানেন না, সিসি ক্যামেরা ও ভয়েস রেকর্ডার পরস্পরের পরিপূরক।’’ জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, “সরকারি স্কুলগুলিতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। কোথাও আপত্তি হয়নি। মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুল নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলা হবে।’’