সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কাটা আগেই ছিল। রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলে তা নিয়ে চিঠিও পাঠিয়েছিল ওষুধ দোকানের মালিকদের একটি সংগঠন। জিএসটি চালুর এক সপ্তাহ পরে এখনও জীবনদায়ী ওষুধের সরবরাহ দুর্গাপুরে স্বাভাবিক হয়নি বলে দাবি দোকান মালিকদের। এই পরিস্থিতিতে মজুত ওষুধ শেষ হয়ে গেলে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় বিক্রেতা থেকে রোগীর পরিজন, সকলেই।
সমস্যাটা কোন খানে? প্রথমত, দুর্গাপুরের বিভিন্ন ওষুধের দোকান মালিকের দাবি, জিএসটি-র করের হার অনুযায়ী মজুত ওষুধ বিক্রির সময় যে পরিমাণ কর নেওয়া যাবে, তার থেকে বেশি হারে কর দিতে হবে বিক্রির জন্য। ফলে অনেকেই বেশি ওষুধ মজুত করেননি। দ্বিতীয়ত, আর্থিক ক্ষতি এড়াতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা অনেকেই জিএসটি চালুর কয়েক দিন আগে থেকেই ওষুধ কেনা বন্ধ রেখেছেন। আগে মজুত ওষুধ শেষ করতে চাইছেন তাঁরা। এর জেরে অর্ডার অনুসারে ওষুধ পাচ্ছেন না খুচরো ব্যবসায়ীরা। তৃতীয়ত, খুচরো ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, ওষুধের উপরে বিভিন্ন হারে কর নির্ধারিত হয়েছে জিএসটিতে। ওষুধের দাম নির্ধারক সংস্থা ‘ন্যাশনাল ফার্মা প্রাইসিং অথরিটি’ এইচআইভি, ডায়াবেটিস, অ্যান্টিবায়োটিক ও ক্যানসারের ওষুধ-সহ ৭৬১টি ওষুধের দামের উর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু কোন্ ওষুধে কী হারে কর, সেই তালিকা এখনও সকলে জানেন না বলে দাবি। চতুর্থত, নানা কারণে বহু ব্যবসায়ী জিএসটি রেজিস্ট্রেশন এখনও করাতে পারেননি।
অল ইন্ডিয়া অর্গানাইজেশন অফ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস (এআইওসিডি)-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, ২১ জুনের হিসেবে কিছু ক্ষেত্রে ২২ দিনের ওষুধ মজুত রয়েছে। তবে ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ, হৃদরোগের ওষুধ মজুত রয়েছে আরও কম দিনের। বেনাচিতির বাসিন্দা সিরাজ মণ্ডলের কথায়, ‘‘ফি দিন নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। কিনতে গিয়ে পাইনি। কী হবে জানি না!’’ ডিএসপি টাউনশিপের অপরূপা সরকার বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রী, দু’জনকেই নিয়মিত সুগার, প্রেসার ও হৃদরোগের ওষুধ খেতে হয়। অথচ তিনটি ওষুধেরই বাজারে আকাল দেখা দিয়েছে।’’ বেনাচিতি বাজারে ওষুধ বিক্রেতা সুরেশ কুমারের দাবি, ওই তিনটি ওষুধেরই আকাল শুরু হয়েছে ২৫ জুন থেকে।
এই পরিস্থিতিতে ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-র দুর্গাপুর মহকুমা শাখার সভাপতি জয়দেব কুণ্ডু জানান, সফটওয়্যারের সমস্যা রয়েছে বিভিন্ন সংস্থায়। ফলে সরবরাহকারীদের কাছে ওষুধ আসছে না। তা ছাড়া নতুন পদ্ধতিতে কী ভাবে বিক্রির ‘বিল’ তৈরি হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই বলে দাবি বিক্রেতাদের একাংশের। তবে জয়দেববাবুর দাবি, ‘‘এখনও পর্যন্ত পুরনো মজুত ওষুধ দিয়ে বাজার চলছে। বিক্রেতাদের পুরনো পদ্ধতিতেই ওষুধ বিক্রি করার সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে সেল ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আশা করি সাময়িক সুবিধা হবে।’’