Adenovirus

শ্বাসকষ্ট, জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে সতর্কতা

‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ (এআরআই) বা শ্বাসযন্ত্রে তীব্র সংক্রমণ ও জ্বরের উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান, কালনা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ০৭:৪২
Share:

হাসপাতালে মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

জ্বর, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর পরে জেলা জুড়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। শিশুদের ভিড় থেকে দূরে রাখা, মাস্ক পরানো ও রোগের বিপজ্জনক লক্ষ্মণ সম্পর্কে আশাকর্মীদের সচেতন করা হচ্ছে। তাঁরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তা জানাবেন অভিভাবকদের।

Advertisement

‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ (এআরআই) বা শ্বাসযন্ত্রে তীব্র সংক্রমণ ও জ্বরের উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষের দাবি, দু’বছরের নীচের ওই শিশুদের ওজন কম ছিল। অন্য রোগেরও উপসর্গ ছিল। মৃত্যুর সঙ্গে অ্যাডিনো ভাইরাসের কোনও সম্পর্ক নেই। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তুভ নায়েকও বলেন, ‘‘অ্যাডিনো ভাইরাসে শিশুগুলির মৃত্যু হয়েছে, তা নিশ্চিত নয়। তাদের বিভিন্ন উপসর্গ ছিল। নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে তবেই নিশ্চিত ভাবেবলা যাবে।’’

বুধবার শিশুদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিকাঠামোর খোঁজ নিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার পরে তিনি বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে আসা শিশুরা যাতে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পায়, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যালে বর্তমানে দুশোর বেশি শিশু ভর্তি আছে।তাদের ৪০ শতাংশের অ্যাডিনো ভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এক একটি শয্যায় দু’জন করে শিশু ভর্তি থাকায় ভাইরাস জনিত রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। অধ্যক্ষের দাবি, রাধারানি ভবনে শিশুদের জন্য আরও দু’টি ওয়ার্ড খোলা হচ্ছে। বর্তমানে ১৮৪টি শয্যা রয়েছে। আরও ৪৮টি শয্যা বাড়ানো হচ্ছে।

কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালেও বহির্বিভাগের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জানা গিয়েছে, প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন শিশু বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। পরিস্থিতি জটিল হলে বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হচ্ছে তাদের। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘শিশুদের বহির্বিভাগ বেলা ৪টে পর্যন্ত খোলা থাকবে। শ্বাসকষ্ট বাড়লে মেডিক্যালের সঙ্গে যোগাযোগ করে শয্যা নিশ্চিত করে তবেই স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু হাসপাতাল নয়, প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

কালনা হাসপাতালে শিশুদের জন্য ৪০টি শয্যা রয়েছে। তাতে প্রায় ৭০ জন ভর্তি রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এখনও অ্যাডিনোভাইরাস নিয়ে আলাদা ওয়ার্ড তৈরির নির্দেশ আসেনি। শ্বাসকষ্ট, জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা শিশুদের বিশেষ নজরে রাখা হচ্ছে। স্যালাইন, নেবুলাইজার, অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজন মতো। অনেককেই কাউন্সেলিং করাতে হচ্ছে। দিন চারেক আগে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছেন গুপ্তিপাড়ার মমতা বাগ। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে শ্বাসকষ্টের জন্য নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারলেই বাঁচি।’’ ছোট বহরকুলির রুমা মালিকও বলেন, ‘‘ছেলের জ্বর আছে। সর্দি বুকে জমে রয়েছে। চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছেন, সুস্থ হয়ে যাবে।’’ সুপার চন্দ্রশেখর মাইতি বলেন, ‘‘মঙ্গল ও বুধবার দুটি ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তা মেনে চলার চেষ্টা করছি। এখনও পর্যন্ত অ্যাডিনোভাইরাসে কোনও শিশুর মৃত্যু হয়নি।’’

স্বাস্থ্য দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিটি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা এক জন করে শিশু চিকিৎসক থাকবেন। বিশেষ ক্লিনিক খুলতে হবে। ওই সব ক্লিনিকে পরিদর্শন করবেন হাসপাতাল সুপার, নার্সিং সুপারেরা। পর্যাপ্ত ওষুধ, ভেন্টিলেটর আছে কি না সেটাও দেখতে হবে। মেডিক্যালের সুপার বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে ন’টির মধ্যে ছ’টি ভেন্টিলেটর শিশুদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ওষুধের সমস্যা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement