আদালত চত্বরে অভিযুক্ত গৌরব। নিজস্ব চিত্র।
হার্ডওয়্যারের দোকান। এক প্রৌঢ় কাউন্টারে আসতেই হাতে চলে এল সালফিউরিক অ্যাসিডের বোতল।
চিত্র দুই: দুর্গাপুরের একটি সোনার দোকানের পিছনের দিকে গিয়ে দেখা গেল, সোনা গলানোর কাজ চলছে। পাশে রাখা অ্যাসিডের বোতল। — দু’টি ক্ষেত্রেই কারা অ্যাসিড ব্যবহার করছেন, তা নিয়ে কোনও তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে। অথচ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, ক্রেতার সচিত্র পরিচয়পত্র দেখে ও অ্যাসিড কী কাজে ব্যবহৃত হবে, তা নথিবদ্ধ করার কথা বিক্রেতার। দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকার দোকানিদের যদিও বক্তব্য, ‘এমন নির্দেশ জানি না।’
সোমবার রাতে পূর্বস্থলীর দামপালে এক কিশোরীর গায়ে অ্যাসিড ছোড়়ার অভিযোগ ওঠে। অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে, এ বছর নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৩০টা। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে অভিযুক্তদের হাতে এসেছে অ্যাসিড। তবে উত্তর মেলেনি।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা গেল, সোনার দোকান, ব্যাটারি তৈরির কারখানা, হার্ডওয়্যারের দোকান, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল— সব জায়গাতেই অ্যাসিড রাখা হয়। দুর্গাপুরে বিভিন্ন গয়নার দোকানে সালফিউরিক, নাইট্রিক, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড রাখা হয়।
কিন্তু অ্যাসিড কেনা কী নিয়ম মেনে হয়? বেনাচিতির এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর জবাব, ‘‘নিয়ম কী, তা জানি না। বাড়তি অ্যাসিড কেনা হয় না। তাই দোকানের কেউ অ্যাসিড সরাতে গেলে, ধরা পড়ে যাবেন।’’
তবে প্রশাসন সূত্রের খবর, সবথেকে অনিয়ম দেখা গিয়েছে অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে। দুর্গাপুর স্টেশন বাজার, বেনাচিতি বাজার-সহ বিভিন্ন এলাকায় হার্ডওয়্যার দোকানগুলিতে মাসে গড়ে চার লিটার করে অ্যাসিড বিক্রি হয়। কিন্তু তা তো ভুল হাতেও যেতে পারে? বেনাচিতির এক হার্ডওয়্যারের দোকানের মালিক বলেন, ‘‘সাধারণত মুখচেনা লোকই অ্যাসিডের ক্রেতা।’’
তবে স্কুল, কলেজে অ্যাসিড ব্যবহারের পরিমাণ লিখে রাখা হয়। দুর্গাপুরের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার দোকান মালিকদের দাবি, অ্যাসিড বিক্রির নিয়ম না জানলেও, বিক্রির অনুমোদন রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ রয়েছে, যাঁদের কাছে অ্যাসিড বিক্রির অনুমোদন রয়েছে, তাঁদের রেজিস্টার রাখা বাধ্যতামূলক। অ্যাসিড ব্যবহারকারীদের উপরে নজরদারি চালানোরও নির্দেশ রয়েছে। রেজিস্টারে তথ্য সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানোর কথা। দুর্গাপুরে এই সব নির্দেশের কোনওটাই মানা হয় না বলে প্রশাসনের সূত্রে খবর। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘বেআইনি অ্যাসিড বিক্রি বন্ধ না হলে অম্লরোষে রাশ টানা মুশকিল।’’
এ দিনই বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অ্যাসিড হামলায় আক্রান্ত পূর্বস্থলীর ওই স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করেন সেভ ডেমোক্রেসির চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। সংগঠনের সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুসারে ওই কিশোরী যাতে চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ পায়, তা নজরে রাখা হবে।’’ পূর্বস্থলীর অ্যাসিড হামলায় অভিযুক্ত গৌরব মণ্ডলকে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ দিন আদালত চত্বরেই সে দাবি করে, ‘‘এমন কোনও ঘটনার সঙ্গে আমি যুক্তি নই।’’
(সহ প্রতিবেদন: কেদারনাথ ভট্টাচার্য ও উদিত সিংহ)