কালনার ধর্মডাঙায় লক্ষ্মী পুজোর মণ্ডপ তৈরি। —নিজস্ব চিত্র।
বেহুলা নদীর উপচে পড়া জল মাঠে জমে যাওয়ায় ফসল বাড়ি আনা হত না গ্রামের বাসিন্দাদের। মাঠে ফসল বাঁচাতে তিন দশক আগে কালনা ২ ব্লকের হিজুলি গ্রামে শুরু হয় লক্ষ্মীর আরাধনা। শুধু হিজুলি নয়, কালনা১ ব্লকের হাটকালনা পঞ্চায়েতের ধর্মডাঙা এবং রংপাড়ার বাসিন্দাদের কাছে বছরের বড় উৎসব লক্ষ্মীপুজো। তিন গ্রামে চার দিন ধরে লক্ষ্মীপুজো হয়।
হিজুলি গ্রামে গিয়ে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুজোর আয়োজনে ব্যস্ত বাসিন্দারা। গ্রামে বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো হয় দু’টি। ২৭ বছরে পা দিয়েছে গ্রামের নিউ তরুণ সঙ্ঘের পুজো। জমি পরিষ্কার করে সেখানে মাথা তুলছে মাদুরের মণ্ডপ। উৎসব উপলক্ষে গ্রামের অলিগলিতে লাগানো চলছে আলো। চলে এসেছে জেনারেটর। গ্রামের লক্ষ্মীপুজোয় মূল আকর্ষণ জীবন্ত মডেল। প্রসেন সাঁতরা, সম্রাট মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল, সত্য বাগ, গোপাল মজুমদারেরা উৎসবের রাত থেকেই পাগলা গারদ, হাসপাতাল-সহ নানা দৃশ্য তুলে ধরবেন। শুরুর দিনে রয়েছে ‘অন্নক্ষেত্র’। গ্রামবাসীর দাবি, লক্ষ্মীর আরাধনার পর থেকে সুখ-সমৃদ্ধি ফিরেছে।
পাকা রাস্তায় তৈরি হয়েছে গ্রামের অঙ্কুর ক্লাবের বাঁশের গেট। মেলায় পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে। পুকুরপাড়ে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গা ঘেঁষে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। উদ্যোক্তাদের তরফে তন্ময় মালিক জানান, শনিবার পুজোর উদ্বোধন। পরের দু’দিন জীবন্ত মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, গোপাল ভাঁড়ের নানা দৃশ্য। শান্তিপুর থেকে ১৩ জন শিল্পীর একটি দল আসবে।
ধর্মডাঙা গ্রামে পল্লিশ্রী সঙ্ঘের পুজোর বয়স ৪২ বছর। অতীতে এখানে বড় বড় প্রতিমা তৈরি হলেও, এ বার প্রতিমার উচ্চতা রাখা হয়েছে ১৫ ফুট। মন্দিরের আদলে মণ্ডপের উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট। মণ্ডপ লাগোয়া মঞ্চে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এই গ্রামের আদিবাসী পাড়াতেও হয় লক্ষ্মীর আরাধনা। সেখানে উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছে, আদিবাসী নৃত্য করে বিসর্জনের দিন দেবীকে ঘোরানো হয় এলাকায়। এখান থেকে কিছুটা দূরে রংপাড়া গ্রামে লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে রাস্তার দু’পাশে আলো লাগানো হচ্ছে। উদ্যোক্তারা ব্যস্ত মণ্ডপ তৈরিতে। চাষ-আবাদের উপরে নির্ভরশীল দুই গ্রামে বাসিন্দাদের পুজোয় প্রার্থনা, ফসলের যেন দর মেলে।