সবুজ না গোলাপি— গ্রামের চব্বিশ প্রহরে কী রঙের আবির ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে দু’দল গ্রামবাসীর বিবাদ সংঘর্ষের চেহারা নেয় কাঁকসার রঘুনাথপুরে। রবিবার রাতের সেই ঘটনায় জখম হন তিন জন। বাধা দিতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় এক প্রৌড়ের।
এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছিল সেই রাত থেকেই। তৃণমূলের অভিযোগ, হামলা চালিয়েছে সিপিএম। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্থানীয় এক সিপিএম নেতা-সহ চার জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। আহত তিন জন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের মধ্যে দু’জন নিজেদের তৃণমূলের কর্মী ও এক জন বিজেপি-র কর্মী বলে দাবি করেছেন। আহত বিজেপি কর্মীর সঙ্গে সোমবার হাসপাতালে দেখা করে কথা বলেন দলের নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
পুলিশ জানায়, সেই সন্ধ্যায় চব্বিশ প্রহর শেষে শোভযাত্রা বের করার তোড়জোড় চলছিল গ্রামে। এক দল বাসিন্দা দাবি করেন, গোলাপি আবির চাই। এক পক্ষ আবার জানান, আনতে হবে সবুজ আবির। সোমবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বিজেপি কর্মী সজল বাগদির অভিযোগ, ‘‘সবুজ আবির নিয়ে কয়েক জন জোরাজুরি শুরু করায় আমরা প্রতিবাদ করি। সে নিয়ে গোলমাল শুরু হয়। তার পরেই আমাদের উপরে হামলা হয়।’’ তবে তাঁর দাবি, ‘‘আবিরের রঙের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আমাদের পছন্দ ছিল গোলাপি আবির। সে কথা জানিয়েছিলাম। সেটাই আমাদের দোষ!’’ এ দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন রূপা।
হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তৃণমূল তৃণমূল সমর্থক নির্মল বাগদি ও মিঠুন বাগদিও। সংঘর্ষের ঘটনার সময়ে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে মৃত প্রহ্লাদ ঘোষ (৫০) নির্মলবাবুর বাবা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবি, গোলমালের সময়ে নির্মলবাবুকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা। তখন তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বাড়ির উঠোনেই তিনি পড়ে যান। গোলমাল থামার পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। সার্কেল ইনস্পেক্টর (কাঁকসা-বুদবুদ) বিশ্বজিৎ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। তবে ময়না-তদন্তের পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব হবে।’’
রবিবার ঘটনার পরেই তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বক্সী অভিযোগ করেছিলেন, সিপিএম নেতা উত্তম বাগদির নেতৃত্বে তাঁদের সমর্থকদের উপরে হামলা হয়েছে। পুলিশ রাতেই উত্তমবাবু ও আরও তিন জনকে গ্রেফতার করে। উত্তমবাবু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা নির্দোষ।’’ সোমবার তাঁদের আদালতে তোলা হলে উত্তমবাবুকে এক দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, তাঁকে জেরা করে ঠিক কী ঘটেছিল তা জানার চেষ্টা হবে। বাকি তিন জনকে এক দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ, মঙ্গলবার চার জনকেই ফের আদালতে তোলা হবে।
সিপিএম অবশ্য এই ঘটনার সঙ্গো কোনও যোগের কথা মানতে চায়নি। কাঁকসায় দলের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘একের পর এক মিথ্যা মামলায় আমাদের কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ হচ্ছে। অথচ, বেছে-বেছে আমাদের কর্মীদেরই মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’