নয় নয় করেও আড়াই হাজারের উপরে বিয়ে আর হাজার দেড়েক উপনয়নের প্রধান উদ্যোক্তা তিনি। মন্তেশ্বরের শুশুনিয়ার কালুই গ্রামের অসিত চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ফের তেমনই একটি গণবিবাহের আসর বসল গ্রামে। সেখানে একুশ জোড়া পাত্রপাত্রীর বিয়ে হয়। সেই উপলক্ষে বরযাত্রী থেকে কনেযাত্রী, ভোজ, উপহার থেকে সানাই— বাদ ছিল না কিছুই।
দু’একদিন নয়, গত দু’দশক ধরে এমন কাজ করে চলেছেন তিনি। খরবের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া, লিফলেট ছড়ানো, প্রচারপত্র বিলি করা আর এত দিনের পরিচিতি— এ সবে ভর করে বছরভর পাত্রপাত্রীর সন্ধান করে চলেন পেশায় ব্যবসায়ী অসিতবাবু। আবেদন পত্র জমা দিতেও বলা হয়। তা পেলে শুরু হয় বিয়ের জোগাড়।
এ বার যেমন রাজ্য পরিবহণ দফতর থেকে চারটে বাস ভাড়া করা হয়েছে। তাতে কাকদ্বীপ, সুন্দরবন, বৈঁচি, নবদ্বীপ, পাণ্ডুয়া থেকেও পাত্রপাত্রীরা কালুই গ্রামে এসেছেন। সঙ্গে দু’পক্ষের দশ জন করে লোক। শুধু বাস ভাড়া করে আনা নয়, এঁদের প্রত্যেকের জন্য ছিল রীতিমতো ভূরিভোজের ব্যবস্থা। দু’রকমের মাছ, এঁচড় চিংড়ি, আলুপটল, মাংস ছাড়াও শেষপাতে ছিল চাটনি-মিষ্টি-পাঁপড়। দুপুরের খাওয়ার পর্ব মিটতে বিকেলে শুরু হয় সাজানোর পর্ব। তার আগে পাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বেনারসি শাড়ি, সোনার চুড়ি, কানের দুল, রান্নার বিভিন্ন সরঞ্জাম। ছেলেকে দেওয়া হয় সাইকেল, আংটি, জমা-জুতো ইত্যাদি। অসিতবাবুর কথায়, ‘‘একটি বিয়ে পিছু খরচ হাজার পঞ্চাশেক। আর খাওয়া-দাওয়ার জন্য আরও কিছু খরচ হয়।’’
মেমারির দেবীপুর থেকে মন্তেশ্বরের বিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন চাঁদ ক্ষেত্রপাল, মনীষা ক্ষেত্রপাল। বাঁকুড়ার জয়রামপুর থেকে সুনীল সোরেন, বর্ধমানের বড়ঞা থেকে এসেছিলেন সুমিতা সরেনরা। বিয়ের আয়োজন দেখে রীতিমতো খুশি এঁরা। চাঁদ ক্ষেত্রপালের কথায়, ‘‘একেবারে বাড়ির পরিবেশেই বিয়ে হল।’’
হোটেল, রেস্তোরাঁর মালিক তথা মোহনবাগান ক্লাবের এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য অসিতবাবু জানালেন, মায়ের ইচ্ছেতেই এমন আয়োজন। জানালেন, এক সময় ছোট বোন বন্দনা চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ে দিতে গিয়ে মা শান্তিরানিদেবী প্রবল অনটনে পড়েছিলেন। অসিতবাবুর কথায়, ‘‘ওই সময়ে মা বলেছিলেন, ‘যদি কোনও দিন অবস্থা ফেরে তা হলে এমন দিনে মায়ের কষ্টটা বুঝিস’। মায়ের কথা রাখতেই আয়োজন।’’