পরীক্ষাকেন্দ্রে রাজ। নিজস্ব চিত্র।
বাবার মৃত্যু হয়েছে রবিবার রাতে। দেহ বাড়িতে রেখেই সোমবার সকালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গেলেন তাঁর ছেলে দুর্গাপুরের সিএমইআরআই কলোনি সংলগ্ন এক আবাসনের বাসিন্দা রাজ সাহা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজার বাবা সঞ্জীব সাহা (৫০) বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাছ বিক্রি করতেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন টিউমারের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। রবিবার গভীর রাতে বাড়িতে আচমকা পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। দুই ছেলে রাজ ও রূপ আর ই কলেজ মডেল স্কুলের ছাত্র। দেব সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। রাজ এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাঁর পরীক্ষাকেন্দ্র পলাশডিহা হাই স্কুল। সোমবার ছিল ইংরেজি পরীক্ষা। পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হলেও বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য তাঁকে বেরোতে হয়েছিল ৯টায়। পরিবার সূত্রে খবর, রাজ যখন বাড়ি থেকে বেরোন, তখন তাঁর বাবার দেহ ছিল বাড়িতেই।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নিযুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার অন্যতম জেলা আহ্বায়ক কলিমুল হক অন্য শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনে পলাশডিহা হাই স্কুলে গিয়ে জানতে পারেন ঘটনার কথা। তিনি জানান, পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করেন। পরীক্ষা শেষে রাজকে তাঁরা গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দেন। রাজের মা দেবীর সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। পরীক্ষা নিয়ে রাজের কোনও অসুবিধা হলে তাঁদের জানানোর পরামর্শ দেন। সঙ্গে পাশে থাকার আশ্বাসও।
কলিমুল বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। বাবাকে হারিয়েও মনের জোরে পরীক্ষা দিয়েছেন ওই পরীক্ষার্থী। পরের পরীক্ষাগুলিও যাতে তিনি নির্বিঘ্নে দিতে পারে, তাই কোনও অসুবিধা হলে জানাতে বলা হয়েছে।’’ রাজের বাড়ি গিয়েছিলেন তাঁর স্কুলের শিক্ষক নুরুল হক। তাঁর বাবার দেহ সৎকারের জন্য আর্থিক সাহায্যও করেন। নুরুল বলেন, ‘‘পরিবারটি দুঃস্থ। বাবার মৃত্যুর পরে দুই ছেলে চরম বিপাকে পড়ে গেল। ওরা যেন পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেটাই আমরা চাই।’’