পর্যাপ্ত সংখ্যক স্ট্রেচার না থাকায় বস্তায় করে আনা হচ্ছে জখম শ্রমিকদের, অভিযোগ করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। নিজস্ব চিত্র
ভূগর্ভস্থ খনির ছাদ থেকে কয়লার চাঁই খসে মৃত্যু হল সারদাচরণ মহান্তি (৪৭) নামে এক মাইনিং সর্দারের। জখম হয়েছেন আরও দুই খনিকর্মী। বৃহস্পতিবার ইসিএলের কেন্দা এরিয়ার বহুলা কোলিয়ারির রিয়েল জামবাদ খনির ঘটনা। সারদাচরণ বহুলা কালী মন্দির এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে খনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সুরক্ষাবিধি না মানার অভিযোগ করা হয়েছে।
খনি সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ৮টা নাগাদ প্রথম পালির (শিফ্ট) কাজে যোগ দিয়েছিলেন সারদাচরণ, খনিকর্মী আশুতোষ মাজি ও মনোজ ভুঁইয়া। সারদাচরণ এই কর্মীদের নিয়ে খনির ৩১ নম্বর ‘লেবেলে’ কয়লা কেটে নেওয়া অংশে খনির ছাদ পরিষ্কার (‘ড্রেসিং’) করছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রায় এক মিটার চওড়া কয়লার চাঁই খসে তিন জনের গায়ে পড়ে।
সহকর্মীরাই ওই তিন জনকে খনির উপরে নিয়ে আসেন। প্রথমে তাঁদের সংস্থার ছোড়া রিজিওনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে, দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করানো হয়। ছোড়া থেকে দুর্গাপুর নিয়ে যাওযার পথেই সারদাচরণের মৃত্যু হয়, জানা গিয়েছে খনি সূত্রে।
ঘটনার পরেই সব ক’টি শ্রমিক সংগঠন মৃতের পরিবারের এক জনকে চাকরিতে নিয়োগ, আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও ঘটনার তদন্তের দাবিতে খনির কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখায়। খনি কর্তৃপক্ষ জানান, সংস্থার বিধি মেনে এক জনকে চাকরিতে নিয়োগ করা হবে। সে প্রক্রিয়া চলছে। তার পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মাইনিং ওভারম্যান, শর্টফায়ারার অ্যাসোসিয়েশনের’ ইসিএল শাখার সম্পাদক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কয়লা কাটার পরে খনির ছাদের বিপজ্জনক অংশ পরিষ্কার করতে হয়। তার আগে ওই অংশটিতে লোহার ‘রসা’ লাগাতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে খনি কর্তৃপক্ষ তা না করিয়েই পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, দুর্ঘটনার পরে খনিতে পর্যাপ্ত স্ট্রেচার না থাকায় দু’জনকে বস্তায় চাপিয়ে ডুলিতে করে খনির উপরে তুলে আনা হয়েছে। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মাইন ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের অন্যতম সম্পাদক তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়, সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী, কোলিয়ারি মজদুরসভার সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস চক্রবর্তীদের তোপ, প্রতি বছর ঘটা করে ‘সুরক্ষা-সপ্তাহ’ পালন করে ইসিএল। কিন্তু আদতে শ্রমিক নিরাপত্তায় কাজের কাজ কিছুই হয় না। কেকেএসসির সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক হরেরাম সিংহ বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইসিএলের ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) নীলাদ্রি রায় বলেন, “বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ।” তাঁর সংযোজন: “ডিজিএমএস (ডিরেক্টর জেনারেল অব মাইনস সেফটি) তদন্ত শুরু করেছে।”
এ দিকে, মৃতের পরিবারে রয়েছেন মা, স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে। স্ত্রী রত্না ঘটনার খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমরা আজ সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। তার মাঝেই এই খবর পেলাম। খনি কর্তৃপক্ষের কাছে সুরক্ষার বিষয়ে উদাসীন না থাকার জন্য অনুরোধ করছি।”