প্রশাসনের সাহায্যে প্রাণরক্ষা চার জনের। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে টইটম্বুর খড়ি নদী। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে নদীর জল। সেই নদীতে ভেসে যাওয়া পানসি (নৌকা) আনতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েন দুই প্রৌঢ়। তাঁদের সাহায্য করতে গিয়ে বিপদে পড়েন আরও দুই গ্রামবাসী। অবশেষে প্রশাসনের চেষ্টায় প্রাণরক্ষা হল তাঁদের। পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের ঘটনা।
জলের তোড়ে যে কোনও মুহূর্তে ভেসে যেতে পারে রুজিরোজগারের অবলম্বন পানসি। তাই বিপদকে উপেক্ষা করেই সেটিকে তীরে নিয়ে আসতে নদীতে নেমেছিলেন ভাতারের পারহাট দাসপাড়ার বাসিন্দা ফড়িং দাস এবং কর্ণধর দাস। কিন্ত জলের তোড়ে নিজেরাই খড়খুটোর মতো ভেসে যেতে থাকেন তাঁরা। কোনও রকমে নদীর ধারে একটি গাছ আঁকড়ে ধরেছিলেন দু’জন। দীর্ঘ সময় ওই গাছ আঁকড়ে ছিলেন তাঁরা। কিন্তু নদীতে ক্রমশ জল বাড়ছিল। ওই অবস্থায় দু’জনকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন উত্তম দাস এবং শ্রীকান্ত দাস নামে দুই গ্রামবাসী। কিন্তু উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁরাও পড়েন বিপদের মুখে। প্রাণ বাঁচাতে ওই একই গাছ আঁকড়ে ধরেন তাঁরাও।
দীর্ঘ ক্ষণ চার জন আটকে থাকার পর স্থানীয় কয়েক জনের নজরে আসে দৃশ্যটি। তাঁদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ভাতার থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। শেষ পর্যন্ত বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের সহযোগিতায় চার জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর আধিকারিক প্রতীককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চার জনকেই নিরাপদে উদ্ধার করা গিয়েছে।’’
বড় বিপদ এড়িয়ে কর্ণধর বলেন, ‘‘আমাদের সুরুল মৌজায় জমি আছে। নদী পেরিয়ে চাষাবাদ করতে যেতে হয়। ওখানে তো কোনও সেতু নাই। তাই আমাদের একটি পানসি রাখা থাকে নদীর ধারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি হওয়ায় খড়ি নদীতে জল বাড়ছিল। আমরা দু’জনে পানসি আনতে যাই সকাল ৭টার সময়। কিন্তু মূল নদীতে যেতেই বুঝতে পারি, অবস্থা ভয়াবহ। বিপদ বুঝতে পেরে আমি আর ফড়িং দু’জনে পানসি ছেড়ে গাছ ধরি। না-হলে জলের স্রোতে ভেসে যেতাম। বেলা ২টোর সময় প্রশাসন আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।’’
জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিয়কুমার দাস বলেন, ‘‘বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা ঠিক সময়ে উপস্থিত হয়ে চার জন গ্রামবাসীকে খুব সাহসের সঙ্গে উদ্ধার করেছেন। তাঁদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’’