নিজস্ব চিত্র।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরি জোটেনি। আপনজনেরা বলেছিলেন, ছেলে নিশ্চয় পড়াশোনায় ‘খারাপ’। ‘খারাপ’ বলে হাত ছাড়েন প্রেমিকা। চায়ের দোকান করার পর, তাঁর দোকানের চাকে ‘খারাপ’ বলেছিলেন পড়শি দোকানিরাও। খারাপের গেরোয় আটকে পড়া সেই ছেলেই বাজিমাত করল। সঙ্গী সেই ‘খারাপ’! বাঁকুড়ার ছাতনা লাগোয়া দুবরাজপুর মোড়ের শুভেন্দুর খারাপ চায়ের দোকানে এখন উপচে পড়ে ভিড়।
বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের দুবরাজপুরে বাবা, মাকে নিয়ে আঠাশ ছুঁই ছুঁই শুভেন্দুর ছোট্ট সংসার। গ্রামের স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর হিমাচল প্রদেশের মানব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে সাম্মানিক স্নাতক। প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা থেকে পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের একটি বেসরকারি কলেজ থেকে সেরে ফেলেন ডিএড প্রশিক্ষণ। কিন্তু চাকরি মেলেনি। দেখেশুনে আত্মীয়স্বজনদের কেউ কেউ বলেছিলেন, উচ্চশিক্ষিত হলেও শুভেন্দুর পড়াশোনার মান নিশ্চয়ই ‘খারাপ’। না হলে কি আর একটা চাকরি জুটত না! সম্প্রতি প্রেমিকাও সম্পর্ক ছিন্ন করেন ‘খারাপ’ ছেলের সঙ্গে।
‘খারাপ’ চা বানাচ্ছেন শুভেন্দু নিজস্ব চিত্র।
বছর দুয়েক আগে দুবরাজপুর মোড়ে বাঁকুড়া-পুরুলিয়া রাস্তার পাশে এক চিলতে ভাড়া বাড়ি জুটিয়ে খুলে ফেলেন চায়ের দোকান। অন্য দোকানদারেরা খদ্দের ভাঙাতে শুভেন্দুর চা ‘খারাপ’— এই প্রচার চালাতেন বলেও অভিযোগ। শুভেন্দু বলেন, ‘‘খারাপ শব্দটি নিজের জীবনের সঙ্গে এ ভাবে জুড়ে যাওয়ায়, ভেবেছিলাম দোকানের নামেও থাক সেই শব্দটা। আর তা ভেবেই দোকানের নাম রেখেছি ‘শুভেন্দুর খারাপ চা’।’’
হাসতে হাসতে শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে অনেকেই বিজ্ঞাপন দেখে খারাপ চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে পরখ করে নেন আমার চা ঠিক কতটা খারাপ!’’ এ হেন বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর শুভেন্দুর বিক্রি ৩০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে দৈনিক দুশো থেকে আড়াইশো কাপ চা বিক্রি হলেও এখন প্রতি দিন প্রায় চারশো কাপ চা বিক্রি করেন ‘খারাপ’ চাওয়ালা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী তোতন প্রামাণিক বলেন, ‘‘শুভেন্দুর চায়ের স্বাদ এমনই যে, দিনে অন্তত এক বার তা না পান করলে, মনে হয় দিনভর কিছু একটা বাদ গেছে। শুভেন্দুর চা খারাপ তো নয়ই, বরং ছাতনা এলাকার অধিকাংশ দোকানের থেকে বেশ ভাল।’’