অভিরূপ সাহা
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক তরুণের। মঙ্গলবার সকালে ই এম বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে অভিরূপ সাহা (১৯) নামে ওই তরুণের মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি বেহালার জেমস লং সরণিতে। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লেখা রয়েছে ‘ডেঙ্গি শক সিনড্রোম’।
বৃষ্টির মরসুমে শহরে ক্রমশ বাড়ছে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা পুর ভবনে পুর স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে বৈঠক করবেন তাঁরা। তার মধ্যেই শহরে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
মৃত অভিরূপের বাবা মনোতোষ সাহা রাজ্য পূর্ত দফতরের কর্মী। তাঁরা বেহালার জেমস লং সরণির সরকারি আবাসনে থাকেন। বাড়িতে রয়েছেন অভিরূপের মা এবং ছোট ভাই অভিরাজ। সে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। অভিরূপ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি টেক পড়ছিলেন।
মৃতের মামা পার্থ গুণ বলেন, ‘‘শুক্রবার সকালে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে কাঁচরাপাড়ায় আর এক বোনের বাড়ি গিয়েছিলাম। অভিরূপও আমাদের সঙ্গে ছিল। ওই দিনই অভিরূপের জ্বর আসায় রাতে ওখানে এক চিকিৎসককে দেখানো হয়। তিনি ডেঙ্গি পরীক্ষার পরামর্শ দেন।’’ রাতেই কলকাতায় ফিরে আসেন তাঁরা। শনিবার সকালে তারাতলার কাছে একটি বেসরকারি পরীক্ষাগারে অভিরূপের ডেঙ্গি ও করোনা পরীক্ষা করানো হয়। পার্থবাবু বলেন, ‘‘শনিবার রাতে রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ এলেও ডেঙ্গি পজ়িটিভ আসে। রাতেই আমরা এক চিকিৎসককে দেখাই। উনি বেশ কিছু ওষুধ লিখে আশ্বস্ত করেন, পাঁচ-ছ’ দিনে সুস্থ হয়ে যাবে।’’ পার্থবাবু জানান, সোমবার সকালে অভিরূপের জ্বর না থাকলেও বমি শুরু হয়। বিকেলে তাঁকে ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক দেখার পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পার্থবাবুর কথায়, ‘‘সোমবার ভর্তি করার সময়ে ও বেশ ভালই ছিল। কিন্তু রাতে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, ওর প্লেটলেট নেমে গিয়েছে। তখন প্লেটলেট ছিল আট হাজার। অথচ সোমবার সকালেও প্লেটলেটের পরিমাণ ছিল ৫৪ হাজার।’’
ওই রাতে আড়াইটে নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্লেটলেট সংগ্রহ করে অভিরূপকে দেওয়া হলেও তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ অভিরূপের মৃত্যু হয়। বুধবার মোবাইলে কথা বলার সময় বার বার কেঁদে চলেছিলেন পার্থবাবু। বলছিলেন, ‘‘খুব মেধাবী, ভাল ছেলে ছিল। ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। সব শেষ হয়ে গেল।’’
ই এম বাইপাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গিতে মৃত যুবকের তথ্য তারা কলকাতা পুরসভাকে জানিয়েছে। কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষকে এ ব্যাপারে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ করলেও উত্তর মেলেনি।