West Bengal

অনুদান-প্রকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজ্যের নিজস্ব আয় বাড়ছে কি?

প্রশাসনিক মহলে আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের বক্তব্য, নিজস্ব রাজস্ব আয়ের বড় অংশ সুদ মেটাতেই চলে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। বরং গত কয়েক বছরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

চাহিদার চাকায় গতি ফিরিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা মন্দ নয়। বিশেষত কোভিডবিধ্বস্ত অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে। কিন্তু এ রাজ্যে নতুন অনুদান-প্রকল্পের সংখ্যা এবং চালু প্রকল্পগুলির বহর যে হারে বেড়েছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে রাজ্যের নিজস্ব আয়ও বাড়ছে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান প্রশাসনিক মহলের একাংশ। আর ওই আয় যদি যথেষ্ট পরিমাণে না বাড়ে, তা হলে দীর্ঘ মেয়াদে এই বিপুল সংখ্যক কল্যাণ-প্রকল্পে টাকা জুগিয়ে যাওয়া কী ভাবে সম্ভব হবে, তা নিয়েও চাপা উদ্বেগে তারা। এ ক্ষেত্রে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর নাম সরাসরি না করেও প্রশাসনিক পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের প্রশ্ন, হাতে সরাসরি নগদ দেওয়ার এ ধরনের প্রকল্পে পারিবারিক আয়ের কোনও ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয় না কেন? যাতে শুধুমাত্র যোগ্য উপভোক্তারাই তা পান।

Advertisement

রাজ্যের বাজেট-তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে মাথাপিছু রাজস্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাথাপিছু ঋণ (সবিস্তার সারণিতে)। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, শুধু চারটি প্রকল্পেই (লক্ষ্মীর ভান্ডার, কৃষকবন্ধু, কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রী) খরচের বহর রাজ্যের মোট রাজস্বের ৯.৫% এবং একেবারে নিজস্ব রাজস্ব-আয়ের (কেন্দ্রের থেকে পাওয়া করের ভাগ বাদে) ২৩.৮%। সঙ্গে রয়েছে বেতন, পেনশন, পুরনো ঋণের সুদ, অন্য প্রশাসনিক ব্যয় এবং বকেয়া ডিএ মেটানোর চাপ।

পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব-আয়ের যে অংশ ঋণের সুদ মেটাতে যায়, ২০০৪-০৫ সালে তা ছিল ৮৫.৪%। ২০১০-১১ সালে তা কমে হয় ৫৮.৮%। তৃণমূল সরকারের জমানাতেও ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে তা নেমে এসেছিল ৪৬.২ শতাংশে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তা ফের বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬.০৩ শতাংশে। ওই বছর নিজস্ব রাজস্ব আয় ছিল ৬০,২৮৭.২৪ কোটি টাকা। সুদ মেটাতে হয়েছে ৩৩,৭৮১.৫১ কোটি টাকার। প্রশাসনিক মহলে আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের বক্তব্য, নিজস্ব রাজস্ব আয়ের বড় অংশ সুদ মেটাতেই চলে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। বরং গত কয়েক বছরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে।

Advertisement

অর্থনীতিবিদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ীর কথায়, “গরিব মানুষের সেবা করা দরকার। কিন্তু শুধু আজকের সমস্যা ভাবলে পরশু কী হবে? খরচের অগ্রাধিকার স্থির করা দরকার। সমস্যা হল, ভোট রাজনীতিতে তা হচ্ছে না। এই পাপ আমরা অনেকদিন ধরে করছি।”

প্রশাসনিক সূত্রও মানছে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি রাজকোষের হাল যাচাই করে কোন রাজ্য আর্থিক ভাবে কতখানি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, তার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে যে পাঁচটি রাজ্যে জিডিপি-র তুলনায় ঋণের হার সব থেকে বেশি, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার অবশ্য বলেন, “রাজকোষ ঘাটতির নিরিখে এ রাজ্যের পরিস্থিতি খারাপ নয়। খারাপ নয় এখনকার নীতিও। আয়ের সীমা বেঁধে দেওয়ার দরকার নেই। দরকার সেলফ সিলেকশন।” অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “মানুষের হাতে টাকা পৌঁছনো জরুরি। আমাদের জিএসডিপি-ও বেশি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement