জাহাজ মন্ত্রকই হলদিয়া বন্দরে নিলামের মাধ্যমে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল। সোমবার ওই ব্যবস্থার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া এই স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেছেন, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য জানাতে হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা ২৬ সেপ্টেম্বর। যদিও সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দু’-এক দিনের মধ্যেই ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বন্দর-কর্তৃপক্ষ।
হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসে একচেটিয়া কারবারিদের নিয়ে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে ৮ জুলাই জাহাজ মন্ত্রক সামান্য টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স প্রথার অবসান ঘটিয়ে নিলামের মাধ্যমে পণ্য খালাসকারী সংস্থা নির্বাচন করতে বলে। তারই সূত্র ধরে বন্দরের অছি পরিষদ ১৮ জুলাই হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসে নিলাম ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব পেশ করে।
বন্দর সূত্রের খবর, অধিকাংশ অছি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। জাহাজ মন্ত্রকের নির্দেশে এই ব্যবস্থা চালু করার কথা বলা হলেও অছি পরিষদের বৈঠকে জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিনিধি সি বি সিংহ পর্যন্ত নিলাম প্রথার বিরোধিতা করে পুরনো ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে সওয়াল করেন। একই ভাবে কলকাতা বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান কে জয়কুমার এবং অন্য সরকারি প্রতিনিধিরাও কেন্দ্রীয় প্রস্তাবের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যদিও বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহালোঁ বৈঠকে জানান, এত বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি প্রস্তাবটি নিয়ে এগোবেন। কারণ, জাহাজ মন্ত্রক নিলাম প্রথায় পণ্য খালাসের ব্যবস্থা চালু করতে চায়।
সেই অনুযায়ী ২১ জুলাই কলকাতা বন্দর নিলামের মাধ্যমে পণ্য খালাসের জন্য দরপত্র ডাকে। তাতে বলা হয়, প্রতি টন পণ্য খালাসের জন্য কোনও সংস্থা ১১৯.৪৮ টাকার বেশি নিতে পারবে না। যে-সংস্থা এর পরেও সব চেয়ে কম দর দেবে, তারাই পণ্য খালাসের বরাত পাবে। তার পরে পণ্য খালাস করতে চেয়ে দরপত্র-পূর্ববর্তী (প্রি-বিড) বৈঠকে যোগ দেয় ১৯টি পণ্য খালাসকারী সংস্থা। ২১ অগস্ট দরপত্র জমার শেষ দিন ধার্য করা হয়েছিল। তার আগেই হাইকোর্টে যায় কয়েকটি পণ্য খালাসকারী সংস্থা। তাদের প্রশ্ন, বন্দরের অছি পরিষদের অধিকাংশ সদস্য যে-প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন, বন্দর-কর্তৃপক্ষ কী ভাবে তা রূপায়ণ করবেন? পণ্য খালাসে অছি পরিষদের এই সিদ্ধান্ত বেআইনি বলে মত ওই সব সংস্থার।
কয়েকটি পণ্য খালাসকারী সংস্থার আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি পাথেরিয়া এ দিন তিন সপ্তাহের মধ্যে কলকাতা বন্দরকে এই ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছেন। তত দিন প্রক্রিয়ার উপরে স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে। বন্দরের এক কর্তা বলেন, “সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে আমরা শীঘ্রই ডিভিশন বেঞ্চে যাব।”