সোদপুরে মতুয়াদের রেল অবরোধ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিয়ে বনগাঁয় দ্বিতীয় শক্তি হয়ে ওঠায় রীতিমতো উল্লসিত ছিল বিজেপি। কিন্তু অসমের খসড়া নাগরিক পঞ্জি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সেই জমি হারানোর ভয়ে শঙ্কিত এলাকার বিজেপি নেতারা। কারণ, খসড়া নাগরিক পঞ্জিতে বাদ যাওয়া ৪০ লক্ষ মানুষের মধ্যে মতুয়া সম্প্রদায়ের ১০ লক্ষ নাম রয়েছে বলে অভিযোগ। এ জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান মতুয়ারা। বুধবার বিভিন্ন এলাকায় রেল ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
উত্তর ২৪ পরগনায় মতুয়ারা কয়েক বছর ধরেই তৃণমূলের ভোটবাক্স ভরিয়ে তুলেছে। ইদানীং বিজেপি তৎপর হয়েছে সেই ভোট ব্যাঙ্ক ভাঙতে। বনগাঁ লোকসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী দাঁড় করায় বিজেপি। মতুয়াদের পীঠস্থান, গাইঘাটার ঠাকুরবাড়ির ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের পুত্র সুব্রতকে টিকিট দিয়ে মতুয়াদের মধ্যে আড়়াআড়ি ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করে বিজেপি। জেঠিমা মমতা ঠাকুরের কাছে অবশ্য তিনি ২ লক্ষ ভোটে হারেন। এর পর ২০১৮ পঞ্চায়েত ভোটেও বিজেপি মতুয়া ভোটের একটি বড় অংশ নিজেদের ঝুলিতে পুরেছিল। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে বনগাঁ মহকুমায় গোটা চারেক পঞ্চায়েত সরাসরি দখল করেছে তারা। মোট ৭২৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি পায় ২০১টি আসন। বিজেপির এক নেতা জানান, এ রাজ্যের মোট ৭২টি বিধানসভা আসনে মতুয়াদের প্রভাব রয়েছে। সব ক’টি আসনেই তৃণমূলের প্রভাব খর্ব করে নিজেদের জমি শক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল বিজেপি। সেই মতো মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় তারা।
কিন্তু অসমের ঘটনার পরে এ রাজ্যে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে। মতুয়াদের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে বিজেপি নেতারা আমাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছেন, আর অসম থেকে তাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।’’
মতুয়াদের এই ক্ষোভ নিয়ে বিজেপি নেতারা যে যথেষ্ট চাপে, বুধবার তাঁদের হাবেভাবেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আড়ালে অনেকেই বলেছেন, অসমের ধাক্কায় পায়ের তলার জমি অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁদের রক্তচাপ আরও বাড়িয়েছে বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য। অমিত শাহ জানিয়েছেন, অসমের কাজ শেষ করে অন্য রাজ্যেও নাগরিক পঞ্জি তৈরির কথা ভাবছেন তাঁরা।
এলাকার বিজেপি নেতারা মুখে অবশ্য বলছেন, পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিক্ষুব্ধ মতুয়াদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘আপনারা দেখবেন, অসমে বাঙালি হিন্দু ও মতুয়াদের নাম কোনও মতেই বাদ যাবে না। শুধুমাত্র অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ যাবে।’’ মতুয়া সমাজকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করতে চাইছে তৃণমূল, অভিযোগ বিজেপি জেলা নেতৃত্বের।
এই অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভোটের অঙ্ক কষতে শুরু করেছে তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘অসমের ঘটনার প্রভাব এ রাজ্যে লোকসভা ভোটে পড়বেই। মতুয়ারা বুঝে গিয়েছেন, অসম থেকে ১০ লক্ষ মতুয়া ভক্তদের বিজেপি তাড়াচ্ছে। মতুয়াদের একটি ভোটও ওরা পাবে না।’’ বনগাঁর সাংসদ তথা সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে এখানে এসেছি। এখন কোথায় যাব?’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি সরকার ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে আমাদের পুশ-ব্যাক করতে চাইছে। আমরা তা হতে দেব না।’’