ফাইল চিত্র।
হায়দরাবাদ পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির মেরুকরণের কৌশলে ঘি ঢালল আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম)। গত নির্বাচনে ৪২টি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে ৪২টিতেই জিতেছিল তারা। এ বার বেশি সংখ্যক (৫১টি)ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছে তারা। ফলাফলও আগের তুলনায় কিঞ্চিৎ ভাল। ৪৪টি ওয়ার্ড জিতেছে ওয়েইসির দল। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, বেশি সংখ্যক আসনে দাঁড়িয়ে তাঁর দল প্রকৃতপক্ষে বিজেপি-বিরোধী ভোট কেটেছে। ফলে কমে গিয়েছে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) আসন। কপাল পুড়েছে কংগ্রেস-সহ অন্য দলগুলিরও।
কাল পুরসভা ভোটের ফলাফলের পরে ওয়েইসি জানিয়েছেন, পরের লক্ষ্য বাংলা। তামিলনাড়ু, কর্নাটক এবং অসমেও লড়াইয়ের কথা বলেছেন তিনি। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ওয়েইসির দাঁড়ানোয় বিজেপি-র লাভ হচ্ছে এটা ঠিকই। বিজেপি-বিরোধী মুসলমান ভোটে তাঁর দল থাবা বসাচ্ছে। ফলে বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় আখেরে সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে বিজেপি। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও বলা হচ্ছে, মোদী জমানায় হিন্দুদের সংখ্যাগুরুর রাজনীতি যত বাড়ছে, অন্য দিকে ততটাই সংহত হচ্ছে মুসলমান ভোট। সে ক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির উপর আস্থা কমছে মুসলমানদের। তারা চাইছে মুসলমানদের জন্য পুরোদস্তুর একটি দল। সম্প্রতি বিহারে এবং গত কাল হায়দরাবাদে সেই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়েছে এমআইএম। তাদের প্রচারের সারবস্তুই থাকছে শুধু মাত্র মুসলমানদের উন্নতি। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এক দিকে যতটাই বাড়বে হিন্দুত্বের দাপট, মেরুকরণের ফলে ততটাই বাড়বে ওয়েইসির মতো নেতার প্রভাব।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বিহার ভোটই প্রমাণ করে দিয়েছে কংগ্রেসের হাত থেকে মুসলমান ভোটব্যাঙ্ক খসে যাচ্ছে। কংগ্রেস বা এসপি-র মতো দলের বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজের অভিযোগ, তারা ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ তৈরি করছে বটে, কিন্তু হাতে-কলমে মুসলিমদের অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করার জন্য কোনও পদক্ষেপ করছে না। ওয়েইসির মতো নেতারা এই জায়গাটিতে ঘা দিয়ে বলছেন, কংগ্রেসের মতো দলগুলি ধর্মনিরপেক্ষতার নামে নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করেছে। ইউপিএ জমানায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সাচার কমিটি গঠন এবং তার রিপোর্ট প্রকাশ করলেও তার পরবর্তী সময়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেনি সংখ্যালঘুদের। পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঠিক একই প্রচারকে যে হাতিয়ার করতে চলেছেন ওয়েইসি, তা জানা গিয়েছে দলীয় সূত্রে। তা কতটা কাজে আসবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এর ফলে বিজেপি কিছুটা হলেও উপকৃত হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। এখনই নিজের হাতের তাস দেখাতে চাইছেন না এই মুসলিম নেতা। তাঁর কথায়, “বাংলায় আমরা কী ভাবে লড়ব, তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তবেই জানানো যাবে।”