—প্রতীকী চিত্র।
চায়ের পেয়ালায় বিপদ।
চায়ের গুণমান ঠিক রাখতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে চা পর্ষদ (টি-বোর্ড)। এ বার সেই লক্ষ্যে দেশের খাদ্যসুরক্ষা এবং গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ বা এফএসএসএআই) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অনুরোধ করল টি-বোর্ড। কারণ, তাদের অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় ধরা পড়েছে, বেশির ভাগ চায়েই রয়েছে ক্ষতিকর রাসায়নিক, নিষিদ্ধ কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি। এমনকি, অনেক সংস্থাই যে গুণমান মেনে চা প্রস্তুত করছে না, রিপোর্টে তা-ও উল্লেখ করেছে টি-বোর্ড। সামগ্রিক তথ্য জানিয়ে এফএসএসএআই-কে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত সচিব হৃষীকেশ রাই।
চা উৎপাদন এবং প্রস্তুতকারক অনেক সংস্থাই যে নিয়ম মানছে না, সেই অভিযোগ চা পর্ষদের কাছে বহু দিন ধরেই আসছিল। কয়েক মাস আগে উত্তরবঙ্গের অনেকগুলি চা উৎপাদক সংস্থা এবং মজুতকেন্দ্রে হানা দেয় চা পর্ষদ। ২০ হাজার ৬৬৩ কিলোগ্রাম চা বাজেয়াপ্ত করা হয়। তার থেকে অন্তত ২২ প্রকারের নমুনা চিহ্নিত করে সেগুলি পাঠানো হয় ‘ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরিজ়’ (এনএবিএল) অনুমোদিত পরীক্ষাগারে। পর্ষদের সচিব এফএসএসএআই-কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, এফএসএসএআই-এর মানদণ্ডে প্রত্যেকটি নমুনাই ‘ফেল’ করেছে। নমুনাগুলিতে অ্যাশটামিপ্রিড, ইমিডাক্লোপ্রিড এবং মোনোক্রোটোফস-সহ অনেক ধরনের নিষিদ্ধ কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানাচ্ছেন, বিপজ্জনক রাসায়নিকযুক্ত চা শরীরে নানা ধরনের রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। হতে পারে ক্যানসারও। ফলে যে চা ছাড়া বাঙালির চলে না, তা-ই ডেকে আনতে পারে বিপদ। তা ছাড়া, এ দেশের (বিশেষ করে দার্জিলিং) চা অনেক দেশেই রফতানি করা হয়। ফলে চায়ে ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি থাকলে বাণিজ্যও ধাক্কা খাবে। আধিকারিকদের একাংশের দাবি, সাধারণ চায়ের দোকানে যে গুঁড়ো চা ব্যবহার হয়, ক্লান্তি কাটাতে যার উপর ভরসা করেন চা-প্রেমীরা, তা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাজারজাত হয়। ফলে গোড়ায় গলদ থাকলে ওই বিষ সরাসরি মানুষের শরীরে প্রবেশ করবে।
পর্ষদ-সচিব এফএসএসএআই-কে জানান, অনেক কারখানার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর ও চা-উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ নিম্ন মানের। কিছু কারখানা ব্যবহৃত চায়ের বর্জ্যও চা-উৎপাদনে ব্যবহার করছে, যা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে উপযুক্ত নয়। এই প্রবণতা ২০০৩ সালে ‘টি (মার্কেটিং) কন্ট্রোল অর্ডার’-এর ৫ (ই) ধারা ভঙ্গ করে। পর্ষদ সেই সব চা উৎপাদক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন বলে পদক্ষেপ করবে। এফএসএসএআই-কেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অনুরোধ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের নির্দেশ সত্ত্বেও গুঁড়ো চায়ের একশো শতাংশ নিলাম বাধ্যতামূলক করা যাচ্ছিল না। সম্প্রতি তা বাধ্যতামূলক হয়েছে। ফলে নিলামে অন্তর্ভুক্ত চায়ের নমুনার গুণমান এফএসএসএআই-কে পরীক্ষা করাতেই হবে। যে চায়ের নমুনায় ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি মিলবে, সেগুলির পুরোটাই নষ্ট করে ফেলার সুযোগ রয়েছে।