কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
মনোনয়ন পর্ব থেকে পঞ্চায়েত ভোটের গণনা পর্যন্ত হিংসা নিয়ে বুধবার রাজ্য, রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রের রিপোর্ট চেয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। পাশাপাশি বুধবার হাই কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যে আগামী দশ দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পরিকল্পনায় শামিল হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী দশ দিন মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে। সেই কমিটিতে রাজ্য পুলিশের ডিজি, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-র পাশাপাশি রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল অফিসার হিসেবে নিযুক্ত বিএসএফের আইজি-ও থাকবেন। পরিকল্পনার বৈঠকে আইজি (বিএসএফ) তাঁর প্রয়োজন মতো কেন্দ্রীয় বাহিনীর অফিসারদের নিয়ে যেতে পারবেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত যাতে ঠিক মতো কার্যকর হয় সে জন্য মুখ্যসচিব এবং ডিজি দায়বদ্ধ থাকবেন।
কোর্টের আরও নির্দেশ, ভোটে নিযুক্ত কমিশনের নোডাল অফিসারেরা আগামী দশ দিন জেলাতেই থাকবেন। দৈনন্দিন পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরা নতুন কমিটিকে রিপোর্ট পাঠাবেন এবং সেই রিপোর্টের প্রতিলিপি পৃথক ভাবে বিএসএফের আইজি-কে পাঠাবেন।
পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন-সহ একাধিক বিষয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী-সহ একাধিক মামলাকারী কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর রিপোর্ট তলব করেছিল কোর্ট। এ দিন শুনানির শুরুতেই কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী বিএসএফের আইজি-র রিপোর্ট জমা দেন। সেই রিপোর্ট দেখে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই রিপোর্টে (কেন্দ্রীয় বাহিনীর রিপোর্ট) গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগ যদি সত্য হয়, তা হলে কমিশন যে ইচ্ছাকৃত ভাবে আদালতের অবাধ্য হয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ তবে তাঁর মতে, এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে কমিশন এবং রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে চায় কোর্ট। ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে সেই রিপোর্ট কোর্টে জমা দিতে হবে। ২৬ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এ দিন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কোথায়, কী ভাবে মোতায়েন করা হবে সে ব্যাপারে বারবার জানতে চাইলেও কমিশন কোনও তথ্য দেয়নি। বাহিনীর জওয়ানদের যাতায়াতের বন্দোবস্ত করা হয়নি, পরিকাঠামোগত সুবিধে দেওয়া হয়নি। তার ফলে বাহিনীর ক্ষতি হয়েছে। এ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর রিপোর্ট দেখে প্রধান বিচারপতি কমিশন এবং রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে এতটাই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে তিনি বলেন, ‘‘কাল থেকে তা হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী আইনশৃঙ্খলা সামলানোর নেতৃত্ব দিক। রাজ্য এবং কমিশন সেই নির্দেশ মেনে চলুক।’’ মুখ্যসচিব এবং পুলিশের ডিজি-র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস জারি করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, রাজ্য সব ধরনের সাহায্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে করেছে। তা শুনে প্রধান বিচারপতি জানান যে তা হলে সত্য অনুসন্ধানে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য নির্বাচন কমিশনার, মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে কোর্টে এনে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। এজি আর্জি জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নেতৃত্বের ক্ষমতা দেওয়ার বদলে এই বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হোক। সেই কমিটি এ বিষয়ে কাজ করবে। সেই আর্জি মঞ্জুর করে কোর্ট। তবে সেই কমিটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তাকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছে আদালত।
আদালত জানিয়েছে, সব জেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশ যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সব ধরনের সাহায্য করে তা নিশ্চিত করতে হবে নবান্নকে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রত্যেক দলের সঙ্গে স্থানীয় থানার এক জন অফিসারকেও যুক্ত করতে হবে। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ টহলদারি প্রয়োজন। আদালতের নির্দেশের পরেই নিজেদের জওয়ানদের উদ্দেশে এ ব্যাপারে নির্দেশিকা জারি করেছেকেন্দ্রীয় বাহিনী।
পুলিশ সূত্রের খবর, কোর্টের নির্দেশের পর রাত পর্যন্ত ওই কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। আজ, বৃহস্পতিবার বৈঠক হতে পারে। সেই বিষয়ে বিএসএফের আইজি-র সঙ্গে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের কথা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে ৫৩০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে। এ ছাড়াও আছে ভিন্ রাজ্যের ২৫৫ কোম্পানি সশস্ত্র পুলিশ। তবে সেই বাহিনীকে ব্যবহার না করার অভিযোগ এ দিনও উঠেছে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ কর্তাদের আশ্বাস, কমিটির বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে।