গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ছেলে ছাত্র রাজনীতি করতেন বলে শুনেছেন। সেই কারণেও কি তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যুতে গ্রেফতার হওয়া মনোতোষ ঘোষের মায়ের প্রশ্ন এমনই। ইতিমধ্যে যাদবপুরকাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে তিন। রবিবার গ্রেফতার হয়েছেন দীপশেখর দত্ত এবং মনোতোষ ঘোষ নামে দুই ছাত্র।
মনোতোষের বাড়ি হুগলির আরামবাগে। পুলিশ সূত্রে খবর, স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ঘটনায় রাতভর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর রবিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়। মনোতোষের গ্রেফতারি নিয়ে কার্যত হতবাক বাবা-মা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যার দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রের বাবা শান্তিনাথ এবং মা টগর ঘোষ একটি ‘ফাস্ট ফুড’-এর দোকান চালান। রবিবার সকালেও তাঁরা দোকান খুলেছেন। মনোতোষের বাবা বলেন, ‘‘ছেলে একটা কথাই বলেছিল— ‘‘এই ঘটনায় পুলিশ আমাকে ডাকতে পারে। তোমরা চিন্তা কোরো না।’’ আমি নিশ্চিত যে, আমার ছেলে কোনও খারাপ ব্যাপারে নেই। এখন পুলিশ পুলিশের কাজ করছে।’’ বলেই দোকানের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। মনোতোষের মা টগরের দাবি, ছেলে ছাত্ররাজনীতি করতেন। সেই কারণেও হয়তো তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বস্তুত, মনোতোষ ছাত্র সংগঠন ‘ফ্যাস’ করতেন। এমনই দাবি তুলে সমাজমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পোস্ট করেছেন এসএফআইয়ের নেতাকর্মী তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বলে দাবি করা কয়েক জন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে থাকতেন ২০ বছরের মনোতোষ। স্বপ্নদীপের বাবার দাবি, সৌরভ চৌধুরী নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী মনোতোষের সঙ্গে স্বপ্নদীপের আলাপ করিয়ে দেন। তাঁর রুমে কিছু দিন অতিথি (গেস্ট) হিসেবে ছিলেন স্বপ্নদীপ। পরে অন্য একটি ঘরে থাকতেন তিনি।
মনোতোষের বাড়ি আরামবাগ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সার্কাস ময়দানে। তাঁর বাবা-মায়ের ‘ফাস্ট ফুড’-এর দোকানটি আরামবাগের গৌরহাটিতে। সারাদিন দোকানদারি করে রাতে বাড়ি ফেরেন স্বামী-স্ত্রী। তাঁরা জানান, রবিবার রাতে মনোতোষের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁদের। মনোতোষের বাবা বলেন, ‘‘যাদবপুর থানায় ডেকেছে বলল ও। জানাল, ও যাবে, ভয়ের কোনও কারণ নেই।’’ তবে তাঁদের ছেলে কারও মৃত্যুর কারণ হতে পারে না বলে দৃঢ় বিশ্বাস ঘোষ দম্পতির। মনোতোষ আরামবাগ হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন। বাবা-মায়ের দাবি, ছেলে ছোট থেকে পড়াশোনায় খুব ভাল। বলেন, ‘‘কখনও কেউ কোনও দিন ছেলের নামে অভিযোগ করেনি।’’
রবিবার শান্তিনাথকে যাদবপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠি আরামবাগ থানা থেকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শান্তিনাথ বলেন, ‘‘যাব যাদবপুর থানায়। আমার ছেলে কোনও দোষ করেনি। আমি তো ঘটনাস্থলে ছিলাম না। কী হয়েছে, না হয়েছে জানি না। থানায় গেলে হয়তো স্পষ্ট হবে।’’