প্রতীকী ছবি।
ওয়েবসাইটের নাম ‘আর্মসলাইসেন্স’। এত নিখুঁত কাজ যে, তাজ্জব বনে গিয়েছেন দুঁদে গোয়েন্দারাও। তাঁরা জানান, অশোকস্তম্ভ দিয়ে রীতিমতো সরকারি দফতরের সাইটের অনুকরণে সেটি তৈরি করা হয়েছিল। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সেটি ভুয়ো। সেখানে অস্ত্রের জন্য আবদেন করলে ক্রেতার হাতে তা দ্রুত তুলে দেওয়া হত। তার জন্য ভিন্ রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের নামে জাল লাইসেন্স বানাত অস্ত্র ব্যবসায়ী রবিকান্ত কুমার। লালগড় থানা থেকে অস্ত্র লোপাটের ঘটনায় বিহারে ধরা পড়ে সে।
রাজ্য স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফের তদন্তকারীরা রবিকান্তকে জেরা করে জেনেছেন, বিভিন্ন রাজ্যের ভুয়ো অস্ত্র-লাইসেন্স তৈরি করত সে। তার পরে ওই ভুয়ো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করে চোরাই অস্ত্র বিক্রি করা হত সারা দেশে।
এসটিএফ জানিয়েছে, ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরির জন্য রবিকান্তের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ দমন আইনে মামলা করা হবে। রাজ্য এসটিএফের সাইবার শাখা বিষয়টি দেখছে। বৃহস্পতিবার এসটিএফের তরফে রবিকান্তের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার চারটি ধারা যুক্ত করার জন্য পুরুলিয়া আদালতে আবেদন করা হয়। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন। ২২ জুলাই রবিকান্তকে বিহারের ঔরঙ্গাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে গোয়েন্দা হেফাজতে আছে সে।
তদন্তকারীরা জানান, ১০০ জনের নামের তালিকা মিলেছে রবিকান্তের ওই ওয়েবসাইটে, যাদের কাছে চোরাই অস্ত্র ভুয়ো লাইসেন্স বানিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। এসটিএফের গোয়েন্দারা বুধবার সারান্ডার জঙ্গলের আম্বেরাডি গ্রামের একটি বাড়িতে হানা দিয়ে একটি চোরাই একনলা বন্দুক উদ্ধার করেন। রবিকান্ত ভুয়ো লাইসেন্স তৈরি করে সেটি বেচে দিয়েছিল। এই নিয়ে জানুয়ারিতে লালগড় থানার মালখানা থেকে উধাও ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে চারটি বন্দুক উদ্ধার করা হল। এখনও খোঁজ নেই ১৪টি বন্দুকের। ওই ঘটনায় লালগড় থানার দুই পুলিশকর্মীকে আগেই গ্রেফতার হয়েছে।
এক পুলিশকর্তা জানান, রবিকান্ত অধিকাংশ অস্ত্র বিক্রি করেছে বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়ের মতো মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায়। মূলত মাওবাদীদের হাতেই দেওয়া হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। তাকে সাহায্য করেছিল ধৃত মাওবাদী লিঙ্কম্যান চিরঞ্জীবী ওঝা। তার মাধ্যমে অস্ত্র পৌঁছত মাওবাদী জেলাগুলিতে। মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলত চিরঞ্জীবী।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রবিকান্তের বিরুদ্ধে বিহারে কোনও অভিযোগের খবর নেই। তবে পুরুলিয়া থেকে ধৃত বাংলার ব্যবসায়ী চণ্ডী কর্মকারের সঙ্গে তার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। কখনও পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাই করা অস্ত্র, কখনও থানায়
জমা থাকা বন্দুক আবার কখনও বা কোনও মৃত লাইসেন্সধারীর বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চণ্ডী তা পৌঁছে দিত রবিকান্তের কাছে। সেগুলি বিক্রি করা হত ওয়েবসাইট বা চিরঞ্জীবীর মাধ্যমে।