অর্জুন সিংহ। —ফাইল চিত্র।
নকশালবাড়ির তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ‘ক্যালিফোর্নিয়াম’ নামক রাসায়নিক রাশিয়া থেকে আনা হয়েছিল। পরমাণু বোমা তৈরির সেই রাসায়নিক পদার্থ দিয়েই খুনের চক্রান্ত হয়েছিল বলে এ বার দাবি করলেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ। ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদের দাবি, কোনও রকম সতর্কতা অবলম্বন না করে ওই রাসায়নিকের ধারেকাছে গেলে নাকি ‘শরীর গলে গলে খসে খসে মরে যাবেন’ যে কেউ!
ভাটপাড়া পুরসভায় টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগে অর্জুনকে দু’বার তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। প্রথম দিন ভবানী ভবনে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হওয়ার পরেই বিজেপি নেতা দাবি করেছিলেন, রাশিয়ান রাসায়নিক স্প্রে দিয়ে তাঁকে প্রাণে মারার চক্রান্ত চলছে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় বার ভবানী ভবনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগেও একই দাবি করেছিলেন অর্জুন। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি এলাকায় ফ্রান্সিস এক্কা নামে এক তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতের স্ত্রী তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যাও। অভিযোগ, ফ্রান্সিসের বাড়ি থেকে ক্যালিফোর্নিয়াম নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মিলেছে। অর্জুনের দাবি, সেই রাসায়নিক নাকি রাশিয়া থেকে আনা হয়েছিল! তাঁর কথায়, ‘‘এই কেমিক্যাল সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় রাশিয়ায়। রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আনা হচ্ছে ওই কেমিক্যাল।’’
অর্জুন দাবি করেছেন, তাঁর কাছে খবর আছে যে, নবান্নের নির্দেশে বাংলার বিজেপি নেতাদের একাংশকে প্রাণে মারার চক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এমন ভাবে খুন করা হবে, যাতে কেউই তা বুঝতে না পারে। সেই জন্য রাশিয়া থেকে পরমাণু বোমা তৈরির রাসায়নিক আনা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতা। তিনি বলেন, ‘‘ক্যালিফোর্নিয়াম বলে একটা রাসায়নিক আছে, যেটা পরমাণু বোমা তৈরিতে কাজে লাগে। ফ্রান্সিস এক্কা বলে তৃণমূলের এক নেতার বাড়ি থেকে সেটা পাওয়া গিয়েছে। এটা এমন একটা কেমিক্যাল, যেটার এক গ্রামের দাম ১৭ কোটি টাকা। আমাদের কাছে ইনপুট আছে, নবান্নের নির্দেশে বিজেপির কিছু নেতাকে খুনের চক্রান্ত চলছে। কিন্তু এমন ভাবে খুন করা হবে, যাতে কেউ ধরতে না পারে। এটা এমন একটা কেমিক্যাল, কোনও প্রোটেকশন ছাড়া আপনি পাশ দিয়ে গেলে শরীর গলে গলে খসে খসে মরে যাবেন।’’
দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র বেদব্রত দত্ত বলেন, ‘‘ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বদের কাছে বাংলার বুকে কোনও ইস্যু নেই। ওঁরা এই ধরনের মনগড়া, হাস্যকর দাবি করে থাকেন। এই ধরনের ভিত্তিহীন দাবি তুলে ওঁরা সার্বিক ভাবে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করেন।’’
শাসকদল তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে অর্জুন দুষলেও, রাজ্য পুলিশেরই সহায়তায় গ্রেফতার হয়েছেন ফ্রান্সিস। পুলিশ ও সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে সুকনা ত্রিশক্তি কোরের গোয়েন্দাকর্তারা, কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও দার্জিলিং জেলা পুলিশের অন্তর্গত পানিঘাটা ফাঁড়ির পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ফ্রান্সিসকে গ্রেফতার করেছিল। অভিযোগ, ধৃত ব্যক্তি বেশ কিছু দিন ধরেই দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত। গোয়েন্দা সূত্র মারফত সে রকম খবর পেয়েই অভিযান চালানো হয়। ধৃতের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। তাঁর বাড়ি থেকে ক্যালিফোর্নিয়াম নামে এক ধরনের তেজষ্ক্রিয় পদার্থ মিলেছে। বৃহস্পতিবার ফ্রান্সিসকে কার্শিয়াং আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারকের নির্দেশে ধৃতকে পাঁচ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
সেনাবাহিনী সূত্রে খবর মিলেছে, ফ্রান্সিসের বাড়ি থেকে ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন’ (ডিআরডিও)-এর বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছিল। অনুমান, ওই সব নথি পাচারের চেষ্টা করছিলেন ফ্রান্সিস। তবে বাড়ি থেকে ক্যালিফোর্নিয়াম উদ্ধার হওয়ায় ‘স্তম্ভিত’ গোয়েন্দারা। সেনাবাহিনী সূত্রের দাবি, ওই তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ২০১৫ সালে চুরি গিয়েছিল! মাস তিনেক আগে বিহার থেকে তিন জন গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁদের কাছ থেকেও ওই রাসায়নিক মিলেছে বলে দাবি। ফ্রান্সিসের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ওই ক্যালিফোর্নিয়াম ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাটোমিক এনার্জি’তে পাঠানো হয়েছে বলে খবর সেনাবাহিনী সূত্রে।