ফাইল চিত্র।
জলবায়ু বদল এবং জলে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রভাব সুন্দরবনে পড়ছে বলে বার বার জানাচ্ছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। এমন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের প্রভাব বাদাবনের দক্ষিণরায়ের উপরে কতটা পড়ছে, তা নিয়েও চর্চা চলছে। আজ ২৯ জুলাই, বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস। তার প্রাক্কালে সুন্দরবনের বাঘের উপরে প্রকৃতির ভারসাম্য বদলের কুপ্রভাব কতটা এবং কী ভাবে পড়ছে, বাঘের চরিত্রে পরিবর্তন আসছে কি না, সেই সব প্রশ্ন জোরালো হয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-বিজ্ঞানী পুনর্বসু চৌধুরীর মতে, বাঘ সুন্দরবনের সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রের একটি অংশ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য যদি বাস্তুতন্ত্রে ব্যাঘাত ঘটায়, তা হলে বাঘও তার থেকে রেহাই পাবে না। তাঁর ব্যাখ্যা, লবণ বৃদ্ধির ফলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে। তাতে মানুষ বাধা না-দিলেও ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অধিবাসীরা লোকালয়ের দিকে চলে এলে মানুষ ও সেই বন্যপ্রাণীদের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য। বাঘ যদি খাবারের খোঁজে লোকালয়ের কাছে আসতে থাকে, তা হলে সুন্দরবনের বাঘ ও মানুষের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।
পরিবেশবিদদের অনেকের মতে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে এমনিতেই সুন্দরবনে বাঘ ও মানুষের সংঘাত বেড়েছে। অনেকেই স্বাভাবিক পেশা হারিয়ে মাছ ও কাঁকড়া ধরার কাজে নেমেছেন। মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গিয়ে খাঁড়িতে বাঘের হানায় প্রাণ হারানোর ঘটনাও বিরল নয়।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবের পরেও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে বলে বন দফতর সূত্রের খবর।
বাঘের চরিত্রে কোনও বদল আসছে কি না, তা জানতে উৎসুক বন দফতরও। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মঙ্গলবার জানান, বাঘের উপরে নজরদারির জন্য সুন্দরবনে আরও সুসংহত ভাবে ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। এর আগে সুসংহত পদ্ধতিতে ক্যামেরা ফাঁদ পেতে বাঘশুমারি হয়েছে।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) বিনোদকুমার যাদব জানান, সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র নিয়ে নিবিড় গবেষণার জন্য সজনেখালিতে ম্যানগ্রোভ রিসার্চ সেন্টার তৈরি হবে। তার প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবন জীবমণ্ডলের জন্য আগামী পাঁচ বছরের ম্যানগ্রোভ পরিকল্পনাও তৈরি হয়েছে। নিবিড় নজরদারি ও টহলের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে একটি পৃথক কন্ট্রোল রুম।