প্রথম স্থানাধিকারী অর্চিষ্মান পাণিগ্রাহী। ছবি: তাপস ঘোষ।
মাধ্যমিকে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। মনের এক কোণায় চাপা যন্ত্রণাটা ছিলই। সোনালি স্বপ্নটা হাতের এক্কেবারে নাগালে এসেও হাতছাড়া হওয়ার যন্ত্রণা।
গোটা রাজ্যের মধ্যে প্রথম হওয়ার স্বপ্নটা তাই থেকেই গিয়েছিল। জেদটা চেপেছিল সে দিন থেকেই। পরের পরীক্ষায় প্রথম হতেই হবে। আর সেই জেদের উপর ভর করে স্বপ্নটা পূরণ করেই ফেললেন হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের পড়ুয়া অর্চিষ্মান পাণিগ্রাহী। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোটা রাজ্যের মধ্যে প্রথম তিনি। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬। ইতিমধ্যেই ফিজিক্স নিয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়ে গিয়েছেন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি)-এ।
নিজের উপর বিশ্বাস ছিল, উচ্চ মাধ্যমিকে দশের মধ্যে থাকবেন। অর্চিষ্মানের কথায়, ‘‘পড়াশোনাটা মন দিয়ে করেছিলাম। পরীক্ষাটা ভালই হয়েছিল। নিজের উপর বিশ্বাস ছিল।’’ বড় ছেলের নাম যে মেধা তালিকায় আসবে, এ বিশ্বাস ছিল মা কাজলি পাণিগ্রাহীরও। কিন্তু আফসোস একটাই, ছেলেটাকে একদম সময় দিতে পারেন না। চুঁচুড়ার অনুকূলচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কাজলিদেবী। সকালে বেরিয়ে যান, আর বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তিনি বললেন, ‘‘দুই ভাই সারাটা দিন প্রায় একাই থাকে। অর্চিষ্মান খুব বুঝদার। নিজের পড়াশোনা কোনও সময়েই হেলাফেলা করে না। পড়াশোনা নিয়ে ও খুব যত্নশীল।’’
আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকে জেলার জয়জয়কার, প্রথম হুগলির অর্চিষ্মান পাণিগ্রাহী
দাদার যাতে পড়াশোনায় কোনও ভাবে অসুবিধা না হয় সে দিকে খেয়াল ছিল ভাই অভিজ্ঞানের। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সে। অনেক সময়েই দুই ভাইয়ের জন্য ভাতে-ভাত রান্না করে নেয়।
বাবা অর্ঘ্য পাণিগ্রাহী ঝাড়গ্রাম কলেজের শারীরবিজ্ঞানের অধ্যাপক। ঝাড়গ্রামেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। বাড়িতে আসেন সপ্তাহে এক দিন। ছেলের পড়াশোনায় সে ভাবে নজর দিতে পারেনই না। তিনি বলেন, ‘‘আমি খুব খুশি। আমার আশা, ও অনেক বড় হোক।’’
আত্মীয়-পরিজনে এ দিন ভর্তি বাড়ি। শুভেচ্ছা জানাতে হাজির প্রতিবেশী, স্কুলের শিক্ষক সব্বাই। কিন্তু অন্য দিনগুলোতে গোটা বাড়িটা খাঁ খাঁ করে। শুধু বয়স্ক ঠাকুমার কড়া নজর থাকে সর্ব ক্ষণ। অর্চিষ্মানের অবসর সময়ের সঙ্গী গল্পের বই আর গিটার। দাদা গিটার বাজানো শুরু করলে, অভিজ্ঞানও তবলা নিয়ে বসে পড়ে তাঁরই পাশে। গিটারের সুর আর তবলার বোল মিলেমিশে আবেশ তৈরি করে অর্চিষ্মানদের বসত ভিটেয়।