Caste Certificate

জাতি শংসাপত্র চেয়ে শিবিরে ডিডিএলজে-ও!

শুধু ‘ডিডিএলজে’ নয়, ‘এএএ’, ‘এবিসি বিবিবি’, ‘জিএফজি’, ‘এলএম’, ‘এনএন’, ‘ভিভিভি’, ‘ডিভিডি’র মতো আজগুবি নামের গাদা গাদা আবেদনপত্র রাজ্য জুড়ে চলা দুয়ারে সরকারের শিবিরে জমা পড়েছে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৪৭
Share:

—প্রতীকী ছবি

প্রার্থনা শুধু একটি এসসি বা তফসিলি জাতির শংসাপত্রের। সেই চাহিদা জানাতেই সেলুলয়েড ছেড়ে ‘ডিডিএলজে’ (দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে) সটান পৌঁছে গিয়েছে বঙ্গের ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে!

Advertisement

শুধু ‘ডিডিএলজে’ নয়, ‘এএএ’, ‘এবিসি বিবিবি’, ‘জিএফজি’, ‘এলএম’, ‘এনএন’, ‘ভিভিভি’, ‘ডিভিডি’র মতো আজগুবি নামের গাদা গাদা আবেদনপত্র রাজ্য জুড়ে চলা দুয়ারে সরকারের শিবিরে জমা পড়েছে। আবেদনকারীদের সকলেই চান জাতি শংসাপত্র। সেই সব আবেদনের ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন আধিকারিকেরা। সরকারি সূত্রের হিসেব, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাতিল হওয়া এমন আবেদনপত্রের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার। ৩ জানুয়ারি, রবিবার সংখ্যাটা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আবার ‘ডুপ্লিকেট’ বা একাধিক বার জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা প্রায় ১,৪৫,০০০! শুধু ডিসেম্বরেই একাধিক বার জমা পড়া আবেদনপত্রের সংখ্যা ৯৩,০০০। আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শংসাপত্র চেয়ে এক-এক জন ছয় থেকে আট বার পর্যন্ত আবেদন করেছেন!

দ্রুত জাতি শংসাপত্র দেওয়ার জন্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল থেকে বিপুল চাপ রয়েছে অফিসারদের উপরে। প্রশাসনের শীর্ষ মহল নির্দেশ দিয়েছে, পরিবারের এক জনের নথি থাকলে অন্যদের ক্ষেত্রে আলাদা অনুসন্ধানের প্রয়োজন নেই। নথি দিতে না-পারলে প্রশাসনকে খুঁজে দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর পরিবারে অথবা সরকারি কাগজে প্রামাণ্য কোনও তথ্য রয়েছে কি না। পত্রপাঠ ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না আবেদনকারীকে।

Advertisement

কিন্তু আবেদনপত্র ঝাড়াই-বাছাই করতে গিয়ে এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতা হওয়ায় ন্যূনতম যাচাই এড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারছেন না আধিকারিকেরা। সরকারি সূত্রের খবর, বিডিও-দের কাছে এ-পর্যন্ত জমা পড়েছে ৭,৭২,০০০ নথি। বিডিও-রা তার মধ্য থেকে যাচাই করে প্রায় ৪,৪১,০০০ নথি পাঠিয়েছেন এসডিও-দের কাছে। এক কর্তা বলেন, “গোটা প্রক্রিয়াটি খুব কঠিন এবং জটিল। ফলে অত্যন্ত সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। গোটা রাজ্যে অফিসারদের নিয়ে তৈরি প্রায় ৪৭০০ বিশেষ দল অনুসন্ধানের কাজে নিযুক্ত আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিষেবা যথাসাধ্য নিশ্চিত করার তাগিদে বাড়াতে হয়েছে সার্ভারের গতিও।”

সরকারি নির্দেশ মানতে গিয়ে শংসাপত্র দেওয়ার গতি বাড়িয়েছে প্রশাসন। ৩১ ডিসেম্বর যেখানে প্রায় ৩,১৭,০০০ আবেদন মঞ্জুর হয়েছিল, সেখানে ৩ জানুয়ারি সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৪,১২,৪৮৯।

প্রশাসনিক কর্তাদের আশা, ১০ তারিখের মধ্যে মঞ্জুরিপ্রাপ্ত আবেদনপত্রের সংখ্যা সাত লক্ষ পেরিয়ে যাবে। পরিষেবা দেওয়ার নিরিখে এখনও পর্যন্ত শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ক্রমতালিকায় ওই জেলার পরেই রয়েছে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, মালদহ, কোচবিহার।

এই অবস্থায় বিশেষ কিছু পদবির লোকজনের আবেদনপত্রও চাপ বাড়িয়েছে অফিসারদের। সরকারি মহলের ব্যাখ্যা, সংশ্লিষ্ট পদবিগুলির বেশির ভাগই বিভিন্ন সাবেক রাজশক্তির দেওয়া উপাধি বিশেষ। রাজশক্তির অস্তিত্ব এখন না-থাকলেও উপাধিগুলি রয়ে গিয়েছে পদবি হিসেবেই। সাধারণ ভাবে তথাকথিত উচ্চবর্ণ বা সম্পন্ন উচ্চবর্গের মধ্যেই এই ধরনের পদবির আধিক্য দেখা যায়। তথাকথিত পিছড়ে বর্গ, দলিত শ্রেণির মধ্যে এমন পদবির প্রচলন বিশেষ নেই। সে-দিক থেকে তাঁদের তফসিলি জাতি বা অন্যান্য অনগ্রসর জাতির তালিকাভুক্ত হওয়ার কথাই নয়। তবু দেখা যাচ্ছে, সংখ্যায় খুব বেশি না-হলেও এই ধরনের পদবিধারীদের কেউ কেউ জাতি সংরক্ষণের তালিকার অন্তর্ভুক্ত। আধিকারিকেরা জানান, এই ধরনের পদবি দেখেই আবেদনপত্র বাতিল করা সম্ভব নয়, আবার অনুসন্ধান ছাড়া সংশ্লিষ্টদের শংসাপত্র দেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অনুসন্ধানের বাড়তি দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে প্রশাসনকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement