মাড়গ্রামে ফের কংগ্রেসকে নিশানা করলেন অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল। শনিবার মাড়গ্রামে জনসভা করেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি। সেখানেই ঘুরেফিরে আসে কংগ্রেসের কথা। বিধানসভা ভোটে এই এলাকা থেকেই জিতেছেন কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ। অনুন্নয়নের প্রশ্ন অনুব্রত সমালোচনা করলেন মিল্টনের। পাল্টা হিসেবে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন মিল্টনও।
মাড়গ্রাম একসময় কংগ্রেসের অন্যতম ‘গড়’ বলে পরিচিত ছিল। এখন অবশ্য ২৬ সদস্যের রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির একমাত্র সদস্য সিপিএমের রবীন্দ্রনাথ মার্জিত ছাড়া বাকি ২৫ জন সদস্য তৃণমূলে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় অবস্থাটা এমন ছিল না। তৃণমূলের চার জন মাত্র পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিল। কংগ্রেসের ছিল ১৩, সিপিএমের ৭, ফরওয়ার্ড ব্লকের দু’জন। পঞ্চায়েত সমিতিও কংগ্রেসের দখলে ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মাল তৃণমূলের যোগ দেন। তার পরপরই কংগ্রেসের সদস্যরাও একে তৃণমূলে যোগ দেন। পরে সিপিএম-এর ছয় জন এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের দু’জন তৃণমূলে যোগদান করেন। অসিত মাল এবং তাঁর অনুগামীদের তৃণমূলের যোগদানের আগে অবশ্য ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা পরিষদ সদস্য মান্নান শা তৃণমূলে যোগ দেন। পরে সুনীতি মাল নামে আরও এক জেলা পরিষদের সদস্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। আবার তৃণমূলের দখলে না থাকা ৯টি পঞ্চায়েতে এখন কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সদস্যরা দলবদল করায় সব ক’টি পঞ্চায়েতেই তৃণমূলের দখলে।
এমন প্রেক্ষাপটেও কেন বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী অসিত মাল জিততে পারলেন না, তাই নিয়ে এখনও পরিতাপের শেষ নেই তৃণমূল নেতৃত্বের। শুক্রবার হাঁসন বিধানসভা নির্বাচনের নলহাটি থানার লোহাপুর এলাকার কাঁটাগড়িয়া মোড়ে দলীয় সভায় বিধানসভা নির্বাচনের ভুল সংশোধনের জন্য ডাক দেন অনুব্রত মণ্ডল থেকে অভিজিৎ সিংহ, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী সহ অন্য নেতৃত্ব। একই ভাবে কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রসিদ বিধানসভায় কোনও কাজ করেন না বলে দাবি করেছিলেন তৃণমূলের নেতামন্ত্রীরা।
শনিবার রামপুরহাট ২ ব্লকে মাড়গ্রামের সভায় অনুব্রত ফের বিধায়ক মিল্টন রসিদকে এক হাত নেন। অনুব্রতর কথায়, ‘‘আপনাদের এখানে আগের বার মিটিং করে রাস্তা করে দেব বলেছিলাম। এই রাস্তা করে দিয়েছি। আপনারা জানেন না, হাঁসনের বহু পুরানো একটা রাস্তা সংস্কারের জন্য ১৭ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে।’’ এরপরই যোগ করেন, ‘‘আপনারা যা বলবেন, আমরা তা করব। কিন্তু, আপনারা যাঁকে জেতালেন, সেই লোকাল এমএলএ কী করল? বিধানসভায় হাঁসনের কথা বলেন না। মাড়গ্রামের কথা বলেন না। লাভ কী হল জিতিয়ে?’’ তৃণমূল উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি করে না বলেও দাবি করেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি।
অনুব্রতর কটাক্ষ প্রসঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন বলেন, ‘‘দ্বারকা নদের উপর মাড়গ্রাম-তারাপীঠ সেতু, ব্রাহ্মণী নদীর উপরে দেবগ্রাম ঘাটের উপরে সেতু নির্মাণের দাবি, পুরোহিত ভাতার দাবি-সহ এলাকা উন্নয়নের একাধিক দাবি বিধানসভায় উত্থাপন করেছি। সে সব বোধহয় উনি জানেন না!’’
অনুব্রত ছাড়াও এ দিনের সভায় মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিংহ, ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মাল বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন ত্রিদিব ভট্টাচার্য। সকলেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে এলাকাকে বিরোধী-শূন্য করার আর্জি জানান। এ দিনের সভায় ন’টি পঞ্চায়েত থেকে অন্তত কুড়িটি বাসে দলীয় কর্মীদের নিয়ে আসা হয়। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দশ হাজারের বেশি লোক সমাগম হয়।