আনিসের দিদি সাগিরা। নিজস্ব চিত্র
শুক্রবার, রাত তখন দেড়টা হবে। অন্ধকার নির্জন ঢালাই রাস্তা ধরে এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে প্রায় ছুটছেন। সঙ্গে দুই ছেলে। ছোটটা কোলে। মহিলাকে ওই অবস্থায় দেখে রাস্তায় থাকা চার সিভিক ভলান্টিয়ার থামালেন। এ ভাবে কোথায় যাচ্ছেন?
মহিলার উত্তর, ‘‘ভাইকে কারা যেন খুন করে চলে গিয়েছে। বাপের বাড়ি যাচ্ছি।’’
শুনেও নির্বিকার সিভিক ভলান্টিয়াররা, এমনটাই অভিযোগ সাগিরা বিবি নামে ওই মহিলার। যিনি আমতার নিহত ছাত্র-নেতা আনিস খানের দিদি। অত রাতে তিনি একাই দুই ছেলেকে নিয়ে আমতার সারদা গ্রামের খাঁ পাড়ায় বাপের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছন। সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সৌজন্যটুকুও দেখাননি।
সাগিরার ক্ষোভ, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়াররা আমাকে কাঁদতে কাঁদতে আসতে দেখল। তাঁরা যদি আমার কথা শুনে একটু আসতেন, তা হলেও হয়তো কিছুটা ভরসা পেতাম। ওঁদের কাছে সাহায্য পাওয়া গেল না।’’
আনিস হত্যা-রহস্যের তদন্তে পুলিশের উপরে ভরসা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা সালেম খান। সাগিরার মুখে ওই রাতের অভিজ্ঞতার কথা শুনে গ্রামবাসীরাও পুলিশের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদেরই এক জন রবিবার বলেন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়াররা মাঝরাতে এক মহিলাকে ওই অবস্থায় দেখেও কী করে চুপ করে থাকলেন? এক জন মহিলা নিরাপত্তার স্বার্থেও তাঁর পিছু পিছু আসা উচিত ছিল। না এসে অসহায় মহিলাকে দেখেও তাঁরা এড়িয়ে গেলেন। সাধারণ মানুষের তা হলে কী উপকারে লাগবে পুলিশ?’’
আনিসরা তিন ভাই, তিন বোন। আনিস ছোট। সাগিরা বড়। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ওই গ্রামেরই পশ্চিম খাঁ পাড়ায়। বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির মধ্যে দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। স্বামী কর্মসূত্রে সৌদি আরবে থাকেন। শুক্রবার মাঝরাতে সাগিরার ঘুম ভাঙে বোনঝি মুসকানের ফোনে। মুসকানই মাসিকে আনিসের খুন হওয়ার খবর জানায়। শুনেই তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়েন সাগিরা।
গভীর রাতে অসহায় মহিলাকে দেখেও কি সিভিক ভলান্টিয়াররা সাহায্য করতে পারতেন না?
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সাগিরা বিবিকে ঠিক কোন জায়গায় কাঁদতে কাঁদতে যেতে দেখেছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ কিন্তু এ জন্য ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের চিহ্নিত করে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়েছেন তিনি।
রবিবার বাপের বাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে সে রাতের সব কথাই বলছিলেন সাগিরা। এখানে এসে তিনি যখন শোনেন, ‘পুলিশই আনিসকে খুন করেছে’, বিশ্বাসই করতে পারেননি।
সাগিরা বলেন, ‘‘সে দিন রাতে বাড়িতে এসে দেখি, দরজার সামনেটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ভাইকে নিয়ে বাবা অন্যদের সঙ্গে হাসপাতালের দিকে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পরই ফিরে এল। বাবার শরীর আনিসের রক্ত লেগে লাল হয়ে গিয়েছিল। ভাইয়ের দেহ বাড়ির সামনেই শুইয়ে দেওয়া হল।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে ওই এলাকায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল। আমতা থানার পক্ষ থেকে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ছিল সিভিক ভলান্টিয়াররাও। ওই অনুষ্ঠান থেকে রাত ১২টা নাগাদ আনিস বাড়ি ফেরেন। তার কিছুক্ষণ পরেই খুন হন।