ময়নাতদন্তের পর হাসপাতাল থেকে বার করা হচ্ছে আনিসের দেহ
হাওড়ার নিহত ছাত্রনেতা আনিস খানের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ময়নাতদন্তের পর আনিসের দেহ নিয়ে আমতার সাজদা গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ছাত্রনেতার পরিবার। আপাতত দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে আনিস-কাণ্ডে রাজ্যের গঠন করা বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)।
সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত সোমবার বেলার দিকে কবর থেকে আনিসের দেহ তুলে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের জন্য। সেখানে আনিসের দেহের ময়নাতদন্ত করে হাসপাতালের তিন চিকিৎসকের একটি দল। নেতৃত্বে ছিলেন ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রাণী দাস। উপস্থিত ছিলেন হাওড়া জেলা আদালতের বিচারক এবং সিটের কয়েক জন সদস্য।
ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকেরা জানান, আনিসের দেহ ভাল করে খতিয়ে দেখা হয়েছে। দেহের কোনও আঘাত যাতে নজর না এড়িয়ে যায়, সে দিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কথায়, ‘‘দেহের কোনও অংশ বাদ দেওয়া হয়নি। তার জন্য এক্স রে-সহ যা যা পরীক্ষা করা দরকার, সব করা হয়েছে।’’
ময়নাতদন্তের প্রথম ও দ্বিতীয় রিপোর্টের মধ্যে কোনও পার্থক্য রয়েছে কি না, মূলত তা-ই জানতে চাইছে সিট। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, যদি দুই রিপোর্টের মধ্যে পার্থক্য ধরা পড়ে, তা হলেই আনিসের মৃত্যুর রহস্যভেদ অনেকটা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত থেকে তাঁরা কী কী জানতে চান, তার একটি তালিকা তৈরি করে চিকিৎসকদেরও দিয়েছিলেন সিট-এর সদস্যরা। সূত্রের খবর, প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আনিসের মাথায় আঘাত ধরা পড়েছিল। দেহের আর কোথায় আঘাত রয়েছে কি না, সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে চান তদন্তকারীরা। কারণ, বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, তা হলেই গত সপ্তাহে শুক্রবার মধ্যরাতে আনিসের বাড়িতে ঠিক কী ঘটেছিল এবং কী ভাবে আনিসের মৃত্যু হল, সে সম্পর্কে ধারণা অনেকটাই স্পষ্ট হবে।
সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই আনিসের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত হয়েছে। কিন্তু এতে সন্তুষ্টির কোনও কারণ নেই বলেই স্পষ্ট জানালেন আনিসের পরিবারের আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশনামা মেনেই জেলা আদালতের বিচারকের সামনে ময়নাতদন্ত হয়েছে। পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। এতে আমাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কোনও কারণ নেই। এটা আদালত বলতে পারবে।’’
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের জন্য সিটের হাতে আনিসের দেহ তুলে দিতেই ইচ্ছুক ছিলেন না ছাত্রনেতার বাবা সালেম খান। তাঁদের অভিযোগ ছিল, পরিবারকে অন্ধকারে রেখেই আনিসের ময়নাতদন্ত (প্রথম বার) হয়েছিল। এর পরেই রাজ্য পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে সরব হন তিনি। কিন্তু আনিস-কাণ্ডের মামলা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে গ্রহণ করে সিটের আবেদনে সাড়া দিয়ে হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, পরিবার এবং জেলা বিচারকের উপস্থিতিতে আনিসের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত হবে। এর পর পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও শনিবার ভোর রাতে আনিসের দেহ কবর থেকে তুলে নিয়ে যেতে আসে পুলিশ। কিন্তু গ্রামবাসীদের বাধায় তাদের খালি হাতেই ফিরে যেতে হয়।
এর পর সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ সিটের সদস্যরা আনিসের আমতার বাড়িতে পৌঁছন। তিন সদস্যের এই দলে ছিলেন হাওড়ার বিএমওএইচ এবং এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁরা প্রথমে আনিসের বাবার সঙ্গে কথা বলেন। তার পর শুরু হয় দেহ কবর থেকে তোলার প্রস্তুতি। কিন্তু আনিসের বাবা জানান, জেলা বিচারক না এলে দেহ কবর থেকে তুলতে দেবেন না তিনি। এর পরই বেলা ১২টা নাগাদ এসে পৌঁছন জেলা জজ। তাঁর সামনেই শুরু হয় কবর থেকে দেহ তোলার প্রক্রিয়া। সাড়ে ১২টা নাগাদ আনিসের দেহ কবর থেকে তুলে দুপুর ৩টে নাগাদ নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম-এ।