অসুস্থ সন্তোষ লোধ।নিজস্ব চিত্র।
আজ যিনি লোকসভায় সংসদীয় দলনেতা, সেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিয়ের তদারকিতে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল।
যে সোমেন মিত্রের নামে এক সময়ে কেঁপে উঠত উত্তর কলকাতা, সেই কংগ্রেস নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে ওই ব্যক্তিকে ‘দাদা’ বলে ডাকতেন।
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ওই ব্যক্তির মেয়ের অস্ত্রোপচারের জন্য ক্যাবিনেট বৈঠক ছেড়ে দিল্লির একটি হাসপাতালে গিয়ে বসেছিলেন প্রিয়রঞ্জনবাবু।
বিধাননগরের একতলা বাড়ির একটি ঘরে শয্যাশায়ী অবস্থায় পড়ে রয়েছেন সেই সন্তোষ লোধ। বড়বাজার জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন এই সভাপতিকে এক ডাকে চেনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘শুধু এক জনই চিনতে ভুল করে ফেলল।’’ সেই ভুলের মাসুল হিসেবে এখন জেলের কুঠুরিতে দিনযাপন করতে হবে তৃণমূলের কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে।
প্রায় ৮০ বছর বয়সী সেই সন্তোষবাবুর করা অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার পুলিশ গ্রেফতার করেছে অনিন্দ্যকে।
.
সেই বাড়ি।নিজস্ব চিত্র।
অনিন্দ্যর ওয়ার্ডে বিডি ৩৪৭ নম্বর যে বাড়িটি কয়েক বছর আগে কিনেছিলেন সন্তোষবাবু, তা কার্যত ভাঙাচোরা। নোনা ধরা একতলা বাড়ির সামনের ইটের পাঁজা আর বালির স্তূপ। অনিন্দ্যর ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, সেই বাড়ি দেখে সম্ভবত বাড়ির মালিক সম্পর্কেও একটা ধারণা করে নিয়েছিলেন কাউন্সিলর।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সন্তোষবাবু এখন তাঁর এ-ই ব্লকের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তাঁর অভিযোগ, বিডি ব্লকের বাড়িটি মেরামতি আর সংস্কারের কাজ করতে চাইলে তা আটকে দিয়ে অনিন্দ্য ১২ লক্ষ টাকা তোলা চান।
বিধাননগরেরই এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘ছাইয়ের নীচে যে আগুন থাকতে পারে, অনিন্দ্য বোধহয় সেই প্রবাদটা মনে রাখেননি। তারই খেসারত দিতে হল তাঁকে। বৃদ্ধ সন্তোষবাবুর সঙ্গে আমাদের দলের উঁচুতলার নেতা-নেত্রীদের সম্পর্ক এখনও এতটা গভীর, সেটা অনিন্দ্য আঁচ করতে পারেননি।’’
সূত্রের খবর, গত জুন মাস থেকে অনিন্দ্যর সঙ্গে সন্তোষবাবুর গোলমাল চলছে। সন্তোষবাবুর মেয়ে সুচরিতা ‘তোলা’র অঙ্ক কমাতে অনিন্দ্যকে অনুরোধ করেন। অভিযোগ, অনিন্দ্য তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টে সন্তোষবাবুর ‘ক্ষমতা’কে চ্যালেঞ্জ করেন। অভিযোগ, বিডি-৩৪৭ এ ঢুকে মিস্ত্রিদের হুমকি দেন তিনি। মালপত্র ফেলে দেন। এর পরে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন সন্তোষবাবু। তাঁর ব্রেন স্ট্রোক হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেই সময়ে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সুদীপ ঘটনাটি জানতে পারেন। পরে অনিন্দ্যর বিরুদ্ধে সুদীপের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন সন্তোষবাবু। শেষ পর্যন্ত সেই অভিযোগ পৌঁছয় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
এ দিন যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল সন্তোষবাবুর সঙ্গে। কিন্তু অসুস্থ থাকায় তিনি কোনও কথা বলতে পারেননি।