সামলে রাখুন খুদেকে

দোরগোড়ায় শীত। আবহাওয়া বদলাতে শুরু করেছে। এই বদলের সময়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভোগে সদ্যোজাত এবং শিশুরা। কী ভাবে তাদের আগলে রাখবেন। পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক অশোক দত্তশীত পড়ব, পড়ব করেছে। ঠাণ্ডার হাল্কা আমেজ রয়েছে। আবার রোদ চড়লে গরমে হাঁসফাস অবস্থা। এই সময়ে সদ্যোজাত থেকে ৫-৬ বছরের শিশুদের মূলত তিন ধরনের সমস্যা হয়। ১) হাইপোথারমিয়া ২) ভাইরাস জনিত অসুখ ৩) অ্যাজমা বা হাঁফানি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০৪
Share:

প্রশ্ন: এই সময়ে শিশুদের কী কী ধরনের অসুবিধা হয়?

Advertisement

উত্তর: শীত পড়ব, পড়ব করেছে। ঠাণ্ডার হাল্কা আমেজ রয়েছে। আবার রোদ চড়লে গরমে হাঁসফাস অবস্থা। এই সময়ে সদ্যোজাত থেকে ৫-৬ বছরের শিশুদের মূলত তিন ধরনের সমস্যা হয়। ১) হাইপোথারমিয়া ২) ভাইরাস জনিত অসুখ ৩) অ্যাজমা বা হাঁফানি।

প্রশ্ন: হাইপোথারমিয়া কী?

Advertisement

উত্তর: শীতে সদ্যোজাত কিংবা শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। এই অসুখ দু’ভাবে শিশুর দেহে বাসা বাধে। একটি, পেট গরম থাকে কিন্তু হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রথমে বাড়ির দরজা-জানলা দিয়ে যাতে হাওয়া ঢুকতে না পারে, তার বন্দোবস্ত করতে হবে। তার পরে ঘরে রুম-হিটার বা ১০০/২০০ পাওয়ারের বাল্ব জ্বালিয়ে রেখে ঘরটিকে গরম রাখতে হবে। এই পদ্ধতিতে শিশুর দেহ গরম হয়ে উঠলে, সে সুস্থ হয়ে উঠবে। আর একটি হয়, শিশুর পেট-হাত-পা আচমকা ঠান্ডা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। শিশুকে ওয়ার্মার বা ইনকিউবেটরে রেখে চিকিৎসা করতে হয়।

হাইপোথারমিয়া হলে শিশুটির মাথা কাজ করবে, তবে খাবারে অনীহা দেখা দেবে, শ্বাসকষ্ট হবে, শিশুটি ঝিমিয়ে পড়বে, ত্বক শক্ত হয়ে যাবে। এই রোগকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলে থাকি। ঘুমনোর আগে দেখলেন শিশুটি ঠিক আছে, অথচ রাতের মধ্যেই শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়ে পড়ে। দিনদিন এই রোগের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। কারণ, শিশুরা মায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে থাকছে না। এই সময় শিশুদের মায়ের ওমের খুব প্রয়োজন। ‘স্কিন টাচ’-এ থাকলে মায়ের শরীর থেকেই শিশুটি তাপ পাবে। আর মায়ের দুধ পেলে শিশুর খাবারে টান পড়বে না।

প্রশ্ন: ভাইরাস জনিত কী কী অসুখ হতে পারে?

উত্তর: প্রধানত দু’রকম ভাইরাসে শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে— রাইনো এবং আরএসডি। এই দুই ভাইরাসের জন্যই টানা তিন-চার দিন জ্বর, সঙ্গে সর্দি-কাশি হয়। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু গত তিন-চার বছর ধরে ‘করোনা’ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বর্ধমান ও আশেপাশের এলাকায় প্রাক শীত এই ভাইরাস খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চিন্তার বিষয়। কী রকম?

প্রধান সমস্যা

• হাইপোথারমিয়া। এতে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।

• ভাইরাস জনিত অসুখ। প্রধানত দু’রকম ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে— রাইনো এবং আরএসডি।

• অ্যাজমা বা হাঁফানি। প্রাক্ শীত মরসুমে বাতাসে জীবানু, ধূলিকণার কারণে, শিশুদের শ্বাসনালীর পথ আটকে যায়।

জ্বর-সর্দি-কাশি থাকাকালীনই এই ভাইরাস দেহে ঢোকে। মুশকিল হল প্রথম দিন তিনেক করোনা ভাইরাস শরীরে ঢুকেছে বোঝা যায় না। তিন-চার দিন পরে হঠাৎ শিশুদের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ওই ভাইরাসটি শ্বাসনালীর পথ আগলে রাখে। ঠিকমতো চিকিৎসা হলে প্রায় দু’সপ্তাহ সময় লাগে শিশুটির সুস্থ হতে।

প্রশ্ন: ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় কী?

উত্তর:১) খোলা জায়াগায় শিশুদের স্নান করালে বাতাসে থাকা ভাইরাস শিশুর দেহে ঢুকে পড়ে। তাই ঘেরা জায়গায়, হাল্কা গরম জলে শিশুদের স্নান করাতে হবে। ২) বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে শিশুকে বাইকে করে ঘুরতে নিয়ে যাবেন না। ঘিঞ্জি এলাকায় শিশুকে নিয়ে যাবেন না। তাতে ভাইরাসজনিত রোগের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। ৩) বাড়ির কেউ ভাইরাস-জনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে মাস্ক পড়তে হবে। এতে শিশুর সংক্রামণের আশঙ্কা কমবে। ৪) শিশুর ঠোঁটে চুমু খাওয়া বা নাকে নাক ঘষে আদর পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে।

প্রশ্ন: শিশুদেরও হাঁফানি বা অ্যাজমা হয়?

উত্তর: শিশুদের শ্বাসনালীর পথটি ছোট থাকে। প্রাক্ শীত মরসুমে বাতাসে জীবানু, ধূলিকণা-সহ নানা পদার্থ ঘুরে বেড়ায়। এক বার ঢুকলে শ্বাসনালীর পথ আটকে যায়। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগতে থাকে শিশুটি। শরীরের তাপমাত্রাও কমতে থাকে। প্রথম দিকে সাধারণ ইনহেলার দেওয়া হয়। তাতেও না কমলে স্টেরয়েড দেওয়া ইনহেলার দিতে হয়। অযথা স্টেরয়েড দেওয়া ইনহেলার নিয়ে আতঙ্কে ভুগবেন না। প্রথম থেকে ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে কিন্তু শিশুটি ফুসফুসজনিত রোগে ভুগতে পারে।

প্রশ্ন: এই সময়ে সাধারণত কী কী মেনে চলা উচিত?

উত্তর: প্রধানত চারটি জিনিস মেনে চলা উচিত।

১) প্রতি দিন বিছানার চাদর পাল্টান।

২) ঘর পরিষ্কার করার সময়ে শিশুকে দূরে রাখুন।

৩) পোষ্যদের থেকেও দূরে রাখুন শিশুকে।

৪) বাগানে যাওয়া থেকেও শিশুদের আটকান।

সাক্ষাৎকার: সৌমেন দত্ত

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement