Health Department

কেন বাড়ছে চিকিৎসা-খরচ, দেখতে আট সদস্যের কমিটি

কমিটি গঠনের কারণ হিসেবে এ দিনের ‘কোভিড রেগুলেটরি অর্ডার’-এ দু’টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

বেসরকারি হাসপাতালের লাগামছাড়া বিল নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি এক অ্যাডভাইজ়রি জারি করেছে স্বাস্থ্য কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, চিকিৎসাধীন কোভিড আক্রান্তের দু’হাজার টাকার উপরে কোনও পরীক্ষা করাতে হলে পরিজনেদের কাছে তার কারণ দর্শাতে হবে। একই পরীক্ষা বার বার হলে ব্যাখ্যা দিতে হবে। সেই অ্যাডভাইজ়রির সূত্র ধরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা (প্যাথলজিক্যাল গাইডলাইন) তৈরির জন্য সোমবার আট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কমিটি গড়ল স্বাস্থ্য কমিশন।

Advertisement

কেন কমিটি গড়া হল, সেই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অ্যাডভাইজ়রিতে পরীক্ষার খরচ দু’হাজার টাকার উপরে হলে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোক তো ডাক্তারি জানেন না। চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা সাধারণের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। সে জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ প্রয়োজন।’’

কমিটি গঠনের কারণ হিসেবে এ দিনের ‘কোভিড রেগুলেটরি অর্ডার’-এ দু’টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যার এক দিকে রয়েছে দমদমের একটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক চিকিৎসকের অস্বাভাবিক বিলের প্রসঙ্গ। কোভিড-আক্রান্ত ওই চিকিৎসক সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। হাসপাতালে তাঁর বিল হয়েছিল ২২ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে পরীক্ষা বাবদ খরচই দেখানো হয়েছিল সাত লক্ষ টাকা! কমিশনের সদস্যদের বক্তব্য, কোভিড পরিস্থিতিতে অনেক সময়েই চিকিৎসকেরা না চাইলেও যে কিছু পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন, তা তাঁরা মানছেন। কিন্তু তেমন পরিস্থিতি কেন হচ্ছে, সেটা বুঝতে দরকার এই নির্দেশিকা। তা তৈরির কাজে সদ্য গঠিত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়। অন্য সদস্যেরা হলেন এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান শুভঙ্কর চৌধুরী, সেখানকারই মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান রাজা রায়, ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক শর্বরী সোয়াইকা, স্বাস্থ্য কমিশনের সদস্য-চিকিৎসক মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান বিভূতি সাহা, একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের পক্ষেই মত ডাক্তারদের

আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেন, মেট্রো এখনই চালাবে না রেল

অসীমবাবু বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে থাকা রোগীদের যে সব পরীক্ষার ফলে চিকিৎসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে, তার প্রয়োজনীয়তা দেখবে কমিটি। আমাদের লক্ষ্য চিকিৎসার ভার কমানো।’’

অন্য রাজ্যগুলির বেসরকারি হাসপাতালের খরচ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় প্রতিদিনের খরচ বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি তার মধ্যে কী কী পরীক্ষার খরচ ধরা রয়েছে, সেই উল্লেখ আছে। এ রাজ্যে নির্দিষ্ট ভাবে প্রতিদিনের খরচ বেঁধে দেওয়া না হলেও পৃথক অ্যাডভাইজ়রি জারি করে সেই চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তার কার্যকারিতা নিয়ে।

এ দিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় এক তরুণীর অভিযোগ ঘিরে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্দরে হইচই শুরু হয়েছে। গত ৬ অগস্ট শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে ৭৩ বছরের বাবাকে নিয়ে প্রথমে একবালপুরের এক হাসপাতালে যান যাদবপুরের বাসিন্দা ওই তরুণী। সেখানে বৃদ্ধের কোভিড পরীক্ষা হয়। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগে তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়তে থাকে। কমতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রাও। এই অবস্থায় বৃদ্ধের আইসিইউ শয্যার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অভিযোগ, কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট না-আসায় একবালপুরের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৃদ্ধকে ভর্তি নিতে চাননি। নিরুপায় হয়ে বাবাকে নিয়ে আন্দুলের এক হাসপাতালে যান মেয়ে। তাঁর দাবি, আইসিইউ শয্যা পাবেন এই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরেই সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তারাও জানিয়ে দেয়, করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা নেই। সাত ঘণ্টা বৃদ্ধকে শয্যার অপেক্ষায় থাকতে হয়। শেষে যাদবপুরেরই এক নার্সিংহোমে আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করে ভর্তি করা হয় তাঁকে। তরুণীর কথায়, ‘‘ততক্ষণে বাবার দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ২৭-এ নেমে গিয়েছে। ডাক্তারবাবু পরে বলেন, আর এক ঘণ্টা দেরি হলে কিছু করার থাকত না।’’

কয়েক দিন আগেই স্বাস্থ্য ভবন জানিয়েছে, কোনও অবস্থাতেই আশঙ্কাজনক কোভিড রোগীর শয্যা নিশ্চিত না-করে তাঁকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো যাবে না।

তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, এই নির্দেশিকায় কি গুরুত্ব দিচ্ছেন না বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষেরা?

স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘অ্যাডভাইজ়রি অমান্য করা হলে সেটা কমিশনকে জানানো রোগীর পরিজনের কর্তব্য। অভিযোগ না-পেলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement