বাংলায় ভাল ফলের লক্ষ্যে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনে অংশ নিতে পারেন শাহ। কিন্ত ‘রাজনৈতিক সভা’ করবেন না। —ফাইল চিত্র।
বাঙালির মন ছুঁতে হবে— গত বিধানসভা নির্বাচনে এমন চেষ্টা করেও সফল হননি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে গিয়েও তাঁরা বাঙালির মন জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন এবং জল্পনার জন্ম হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে ‘সংস্কৃতিমনস্ক’ বাঙালি কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘রাজনৈতিক’ বক্তৃতা শুনতে চাইবে বা আসবে?
আপাতত এমনই দোনামোনায় রাজ্য বিজেপি। যার নির্যাস, পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্রজয়ন্তীতে রাজ্যে সফরে এলেও কোনও ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’ হবে না শাহের। এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত করে ফেলেছে গেরুয়া শিবির।
এর আগে বাঙালির নববর্ষ পয়লা বৈশাখ কলকাতায় কাটিয়েছেন শাহ। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বীরভূমের সিউড়ির সভা থেকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ৩৫ আসনে জিততে হবে বলে রাজ্য বিজেপিকে নতুন ‘টার্গেট’ ঠিক করে দিয়েছেন তিনি। আর তার পর দিন পয়লা বৈশাখে কলকাতায় দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে জানান, তাঁর পরবর্তী গন্তব্য হবে মুর্শিদাবাদ। এর পরে ঠিক হয়, আগামী ৮ মে ফের বাংলায় আসবেন শাহ। থাকবেন পরের দিনও। প্রথম দিন জনসভা এবং দ্বিতীয় দিন সাংগঠনিক বৈঠক। ওই দিনটা আবার বাঙালির পরিচিত পঁচিশে বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তী। সবাই যে পঁচিশে বৈশাখ পালন করেন, তা নয়। কিন্তু বাংলায় কবিপক্ষের আবহ তৈরি হয়ে যায়। তাই ওই দিন সে ভাবে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করা হয় না। তাই এখনও পর্যন্ত যেটা ঠিক রয়েছে, বাংলায় ভাল ফলের লক্ষ্যে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনে অংশ নিতে পারেন শাহ। কিন্ত ‘রাজনৈতিক সভা’ করবেন না।
সমস্যা শুরু হয়েছিল রাজ্য বিজেপির দিক থেকেই। কথা ছিল, শাহ আসবেন পঁচিশে বৈশাখের আগের দিন। সে দিন সমাবেশ হবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীর ‘গড়ে’। কিন্তু তার পরে সে ভাবে শাহের জন্য কর্মসূচি সাজাতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। রবীন্দ্রজয়ন্তীর আগের সন্ধ্যায় কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করা যায় কি না বা করলেও কী করা যায়, তা নিয়ে ভিন্ন মত তৈরি হয়েছিল রাজ্য নেতাদের মধ্যেই। এর পরে দিল্লির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় দু’দিন নয়, এক দিনের জন্যই বাংলায় আসবেন শাহ। পঁচিশে বৈশাখ সকালে এসে রাতে দিল্লি প্রত্যাবর্তন।
পঁচিশে বৈশাখের কর্মসূচি আগে থেকেই ঠিক ছিল। সে দিন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে শাহের সফর এবং সন্ধ্যায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা তাঁর। বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের সংগঠন ‘খোলা হাওয়া’ সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে হাজির থাকবেন অমিত। মাঝের সময়টা রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। কিন্তু ওই দিনটিতে দলের সাংসদ, বিধায়ক বা জেলা স্তরের নেতাদের কলকাতায় আনা মুশকিল। কারণ, রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন নিজের নিজের এলাকায় তাঁদের বিভিন্ন কর্মসূচি থাকে। জনসংযোগের জন্য যেখানে উপস্থিত থাকা সংগঠনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
গত কয়েক দিন ধরেই শাহের সফর নিয়ে দোনামোনা চলছিল বিজেপির রাজ্য নেতাদের মধ্যে। তাঁদের একাংশের বক্তব্য ছিল, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ঘোরার পরে শাহ বহরমপুরে গিয়ে সভা করে কলকাতায় সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু অপর একাংশের বক্তব্য ছিল, রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনে শাহকে এনে ‘রাজনৈতিক’ সমাবেশ করলে বাঙালির সঙ্গে দূরত্ব বাড়বে। বিরোধীদের সমালোচনারও শিকার হতে হবে। এর পরেই ঠিক হয়, পঁচিশে বৈশাখে শুধু রবীন্দ্রনাথ নিয়েই থাকুন শাহ।
গত রবিবার দেশ জুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শততম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের যে কর্মসূচি রাজ্য বিজেপি নিয়েছিল, তা কেমন হল, তা নিয়ে মঙ্গলবার রাতে দলের সেক্টর ফাইভের নতুন কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিল রাজ্য বিজেপির কোর কমিটি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে আগামী কয়েক মাস দল কী ধরনের কর্মসূচি নেবে তা নিয়েও কথা হয়। জানা গিয়েছে, দলের চলতি ‘বুথ সশক্তিকরণ’ কর্মসূচি কী ভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে কথা হয়েছে শাহের সফর নিয়েও। জানা যায়, শাহের সফর দু’দিন থেকে কমে এক দিন হবে। শেষ মুহূর্তে বড় কোনও বদল না হলে পঁচিশে বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কলকাতায় কাটাচ্ছেন শাহ।সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। যেখানে পারফর্ম করবেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, নৃত্যশিল্পী তনুশ্রী শঙ্কর, গায়িকা সোমলতা আচার্যেরা। তার পরে থাকবে শুভেন্দু ও শাহের বক্তৃতা।