মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে তাঁর বিরুদ্ধেই কার্যত তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে সরকার পরিবর্তনের সময় এসে গিয়েছে এবং ২০২১ সালের নির্বাচনে নিশ্চিত ভাবেই বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসতে চলেছে বলে দাবি করলেন অমিত শাহ। আজ রাতে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের রাজনীতি যে ভাবে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে, তেমন আর কোথাও নয়। যে রাজনৈতিক দল এই হিংসাকে সমর্থন করছে, তাদের ক্ষমতায় থাকা, দেশের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। বাংলায় হিংসা প্রতিদিন বাড়ছে।’’
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘অমিত শাহের স্বপ্ন হল পশ্চিমবঙ্গে জেতা। এই স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে। লোকসভা ভোটে বিজেপির যে লেখচিত্র ঊর্ধ্বগামী ছিল, করোনা মোকাবিলায় তাদের ব্যর্থতা তা অনেকটাই নামিয়ে দিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের অমানুষিক কষ্টের জন্য শাহ পুরোপুরি দায়ী।’’ হিংসার রাজনীতি প্রসঙ্গে তাঁর পাল্টা জবাব, ‘‘দিল্লিতে অমিত শাহের নাকের ডগায় হিংসা হয়েছে, বিজেপি তাতে প্ররোচনা দিয়েছে। আমি তো লোকসভায় বলেছিলাম, শাহের পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু তাঁর সেই লজ্জাবোধটুকুও নেই।’’ এর আগেও পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের দাবি করেছিলেন শাহ। আজও তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই ভোটের আগে আমি নিজে সক্রিয় হব। বিজেপির সব কর্মকর্তাই সক্রিয় হবেন। আমরা সবাই একজোট হয়ে রণনীতি তৈরি করব।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে আজ তাঁর বিরুদ্ধেই কার্যত তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেন্দ্র রাজ্যের কথা না শুনে, পরিকল্পনাহীন ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন পাঠিয়ে দিচ্ছে— এই অভিযোগ তুলে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ফেরা ট্রেনকে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ আখ্যা দিয়েছেন মমতা। আজ শাহের বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য গোটা দেশের বাঙালি শ্রমিকদের অপমান করার সমান। রাজ্যগুলি যত্ন করে সম্মানের সঙ্গে প্রয়োজনে কিট দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরত পাঠাচ্ছেন। বহু রাজ্যই তাঁদের কোয়রান্টিনের ব্যবস্থাও করছেন। সেখানে এই ধরনের মন্তব্য বাঙালি শ্রমিকদেরই অপমান করা ছাড়া আর কিছু নয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় সব রাজ্যের শ্রমিকরাই ঘরে ফিরে গিয়েছেন। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার তিন-চার লক্ষ শ্রমিকের ফেরা বাকি রয়েছে। মমতাদিদি অল্প অল্প করে ট্রেন নিচ্ছেন। সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেই কারণেই তাঁরা সুবিধা মতো ট্রেন নিচ্ছেন।’’
আরও পড়ুন: পুলিশকে সরিয়ে স্টেশন থেকে পালালেন শ্রমিকরা
করোনা এক্সপ্রেস মন্তব্য ব্যাখ্যা করে সৌগত বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকই বলেছেন। উনি বলতে চেয়েছেন, যে ভাবে ঘেঁষাঘেঁষি করে ট্রেনে শ্রমিকদের আনা হচ্ছে, তা করোনা সংক্রমণের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে। অমিত শাহের বুদ্ধিতে সেটা ধরা পড়েনি।’’
আরও পড়ুন: ‘দরজা খুলুন, আমি কোভিড রোগী!’
প্রসঙ্গত, করোনা মোকাবিলা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে অমিত শাহের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে পাঠিয়ে তার পর রাজ্য প্রশাসনকে খবর দিয়েছেন বলে অভিযোগ। একের পর এক ‘অ্যাডভাইজ়রি’ পাঠিয়ে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে বলেও শাহের সমালোচনা করছে তৃণমূল। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অমিতের উপস্থিতিতেই বিষয়গুলি নিয়ে তোপ দেগেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় করোনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বারবারই সমালোচনা করেছে কেন্দ্র, বারবার দলও পাঠিয়েছে। কিন্তু বিজেপি শাসিত গুজরাতের অবস্থা কী? সাক্ষাৎকারে অমিতের জবাব, ‘‘পরিস্থিতি যতটা ভাল হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি।’’