আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অমিতের উপরই নির্ভর করতে চাইছেন মমতা। ফাইল চিত্র।
মন্ত্রিত্বের মেয়াদ শেষ হলে অমিত মিত্রকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েই অর্থ দফতরে উপদেষ্টা হিসেবে রাখতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটে না লড়লেও নিয়ম অনুযায়ী ছ’মাসের জন্য অমিতকে অর্থমন্ত্রী করেছিলেন মমতা। সেই সময়সীমা শেষ হবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।
মন্ত্রী না থাকলেও মমতা যে রাজ্যের আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অমিতের উপরই নির্ভর করতে চাইছেন, তেমন ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। তাই বিধানসভা ভোটে না লড়লেও অমিতকেই তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। অমিত তাতে সম্মত হন। পরে উপনির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী হতেও অনুরোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শারীরিক কারণে অমিত তাতেও সম্মত হননি। কিন্তু এ কথা বার বার বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁকে যে ভাবে কাজে লাগাতে চান, তাঁর সাধ্যমতো তিনি সেই কাজে সহায়তা করবেন।
তৃণমূল সরকারের শুরু থেকেই অর্থ-ভার অমিতের কাঁধে। রাজ্যের ধারাবাহিক আর্থিক সমস্যার মধ্যেও একের পর এক সরকারি কার্যকর করেছে রাজ্য। ঋণের বহর বাড়লেও, এ পর্যন্ত চালু হওয়া সবক’টি সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষের কাছে কিছু না কিছু সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। একদিকে রাজ্যের অর্থসঙ্কট, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ, সামাজিক প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দ এবং দৈনন্দিন অর্থনীতি— এই দু’য়ের ভারসাম্য রেখে অর্থনীতি পরিচালনা করায় অমিতের উপর মমতার আস্থা আরও বেড়েছে। তাই অমিতকে বাদ রেখে রাজ্যের অর্থনীতি পরিচালনার ভার অন্য কারও উপর ছাড়তে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই মন্ত্রিত্বের মেয়াদ শেষের পরেই অমিতকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, অর্থ দফতরের প্রধান উপদেষ্টা পদে অমিতকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার অর্থ কার্যত তাঁর কাজের পরিধি বাড়িয়ে দেওয়া। আপাতত যা খবর, তাতে কাগজেকলমে অর্থ দফতরের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে রাখবেন। আর নিযুক্ত হবেন এক জন প্রতিমন্ত্রী। সেখানে পুর ও নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নাম সামনে আছে।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, চন্দ্রিমা আইনজীবী হিসাবে অমিত কর সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এক সময়ে এই বিষয়ের বিশিষ্ট আইনজীবী দেবী পালের অধীনেও কাজ করেছেন তিনি।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, চন্দ্রিমা আইনজীবী হিসেবে কর সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এক সময়ে এই বিষয়ের বিশিষ্ট আইনজীবী দেবী পালের অধীনেও কাজ করেছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে অমিতের বদলে চন্দ্রিমাকে রাজ্যের তরফে পাঠানো হয়েছিল। নবান্নের মতে, সেখানে তাঁর ‘ভূমিকা’ ইতিবাচক। অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, “কাজের সূত্রে অমিতের সঙ্গেও চন্দ্রিমার সম্পর্ক মসৃণ। জিএসটি বৈঠকে যাওয়ার আগে তিনি অর্থমন্ত্রী অমিতের সঙ্গে বার বার আলোচনা করে বিষয়টি বুঝে নিয়েছিলেন। সেই মতো বৈঠকে তাঁর যা করণীয়, তা করে এসেছেন।”
মন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে অর্থ দফতরের সচিব পর্যায়ে কোনও রদবদল হবে কি না, সেই গুঞ্জনও নবান্নে রয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত খবর, এমন কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই। সে ক্ষেত্রে বর্তমান অর্থসচিব মনোজ পন্থই কাজ চালিয়ে যাবেন।
বর্তমানে দিল্লিতে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের এক অফিসারকে অর্থসচিব পদে ফেরানোর ব্যাপারে কোনও কোনও স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে নবান্নের শীর্ষ মহলে একটি অভিমত হল, ওই অফিসার এর আগে শিল্প দফতরে কাজ করলেও অর্থ দফতরে কাজ করেননি। তা ছাড়াও কিছু ব্যক্তিগত কারণে ওই অফিসারের দিল্লিতে থাকা হয়তো বেশি সুবিধাজনক।
এ সবের পাশাপাশি রাজ্য মন্ত্রিসভায় অল্পবিস্তর রদবদল হবে কি না, প্রশ্ন ঘুরছে তা নিয়েও। কারণ, বর্তমান মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ অর্থ দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে তাঁর হাতে থাকা অন্যান্য দফতরগুলির পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে। সেই সুবাদে মন্ত্রিসভায় ছোট-বড় রদবদলের সম্ভাবনাও ওয়াকিবহাল মহল উড়িয়ে দিচ্ছে না।