—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বিপুল সংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল নিয়ে সঙ্কটের আবহে স্কুলগুলির পার্শ্বশিক্ষকদের একাংশও বেতন না বাড়ালে অতিরিক্ত কাজ করবেন না বলে জানিয়ে দিলেন। বেতন বাড়ানোর দাবিতে সোম, মঙ্গল এবং বুধবার— এই তিন দিন স্কুল বয়কটের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ বলেন , “২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর পদ বাতিল হওয়ার পরে আমাদের উপরে অস্বাভাবিক চাপ বাড়ছে। নিয়ম অনুযায়ী, পার্শ্বশিক্ষকদের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সপ্তাহে ২০টা ক্লাস নেওয়ার কথা। সেখানে দশম শ্রেণি তো বটেই, একাদশ-দ্বাদশেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। অথচ বার বার বিক্ষোভ আন্দোলনের পরেও বেতন মাত্র ১৩ হাজার টাকা।”
রাজ্যের বহু স্কুলে শিক্ষকের অভাব। উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে অনেক শিক্ষক গ্রাম থেকে শহরে চলে গিয়েছেন। পার্শ্বশিক্ষকদের দাবি, তাঁরা স্কুলের পড়াশোনা ও পড়ুয়াদের সমস্যার কথা ভেবে বছরের পর বছর খাটছেন। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখছেন। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিধানসভায় বলেন, “মনে রাখতে হবে, শিক্ষক এবং পার্শ্বশিক্ষক এক নয়। তবু আমাদের সরকার পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য অনেক কিছু করেছে।” ভগীরথ বলেন, “বাস্তবটা হল, বছরের পর বছর পার্শ্বশিক্ষকেরা এতটাই দুর্দশায়, কেউ স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি ফলের দোকান দেন, কেউ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দায়িত্ব থেকে সরে আসব না। কিন্তু সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আমরা দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার। তাই তিন দিনের জন্য স্কুল বয়কটের ডাক দিয়েছি।”
পার্শ্বশিক্ষকদের একাংশ জানান, সপ্তাহে পাঁচ দিন পড়ানো ছাড়াও আর একটা দিন তাঁদের বাড়ি বাড়ি যেতে হয় স্কুলছুটদের ফেরাতে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্কুলছুট ফেরাতে দেশে প্রথম সারিতে পশ্চিমবঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী এই সাফল্যের কথা বললেও যাঁদের জন্য এই কৃতিত্ব, তাঁদের কথা উল্লেখ করেননি বলে আক্ষেপ পার্শ্বশিক্ষকদের।
পার্শ্বশিক্ষকেরা ক্লাস বন্ধ করলে পরিস্থিতি জটিলতর হবে বলে প্রধান শিক্ষকেরা মনে করছেন। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “রাজ্যে অনেক স্কুলে ছ’-সাত জন পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন। সেখানে হয়তো তিন-চার জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে।” পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের মতো কাজ করতে হলেও পার্শ্বশিক্ষকেরা বঞ্চনার শিকার বলে বয়কট সমর্থন করেছেন তিনি।