শাহজাহান শেখকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সন্দেশখালির নেতা শাহজাহান শেখকে দল থেকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করল শাসকদল তৃণমূল। দলের সমস্ত পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সে কথা জানান রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
বুধবার রাতে মিনাখাঁ থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক শাহজাহানকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরেই শাহজাহানকে কলকাতার ভবানীভবনে নিয়ে আসে পুলিশ।
দুপুরে ব্রাত্য সাংবাদিক বৈঠকে শাহজাহানকে সাসপেন্ড করার বিষয়টি জানান। ব্রাত্য বলেন, ‘‘দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তৃণমূল যে পদক্ষেপ করে, এটাই তার প্রমাণ। যদিও তৃণমূলের কাছে এটা নতুন কিছু নয়। তৃণমূল আগেও এ কাজ করেছে। কিন্তু বিজেপি তো আর তৃণমূল নয়! আমরা প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, শুভেন্দু অধিকারী, হিমন্ত বিশ্বশর্মা বা নারায়ণ রাণেকে সাসপেন্ড করে দেখান উনি! মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী, ব্রিজভূষণ বা অজয় মিশ্র টেনির ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?’’
শাহজাহানকে তৃণমূলের সাসপেন্ড করা নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ বাঁচাতে শাহজাহান শেখকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। এত দিন তো দোষী মানাই হচ্ছিল না। গ্রেফতার বা সাসপেন্ড সবই নাটক। যে ভাবে আদালতে ঢুকছিলেন তিনি, তাতে তো মনে হয়নি গ্রেফতার। মনে হচ্ছিল পুলিশকেই গ্রেফতার করেছেন শাহজাহান।’’ সুকান্তের সংযোজন, ‘‘এখন আরও একটা প্রশ্ন। কোন তৃণমূল সাসপেন্ড করল? পিসি তৃণমূল না কি ভাইপো তৃণমূল? মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ভাইপোর কথাতেই নাকি শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনিই কি এই রাজ্যের ‘সুপার সিএম’?’’
শাহজাহানকে গ্রেফতার করার পর রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার মিনাখাঁয় সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, সন্দেশখালির নেতার বিরুদ্ধে ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। কিন্তু শাহজাহান এত দিন কোথায় লুকিয়ে ছিলেন, তা তদন্তের স্বার্থে গোপন রেখেছেন এডিজি।
গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। সেখানে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন শাহজাহান। তার পর থেকেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। যদিও আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা। শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবি জানিয়ে সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমে সেই বিক্ষোভের আঁচ বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতি দিনই অশান্ত হয়ে উঠেছে সন্দেশখালি। মহিলারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এবং শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগ, গ্রামে শাহজাহান অত্যাচার চালাতেন। জমি জবরদখলের অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
৫৫ দিন ধরে শাহজাহান ‘নিখোঁজ’ ছিলেন। সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কোর্টই পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। না হলে রাজ্য সরকারের পুলিশই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারে। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেছিলেন, “শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ইডি তাঁকে ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আদালতই।’’ এর পর কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, শাহজাহানকে গ্রেফতার করার বিষয়ে আদালত কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। তাঁকে পুলিশ, ইডি বা সিবিআই যে কেউ গ্রেফতার করতে পারে। তার পরেই বুধবার রাতে মিনাখাঁ থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ।