আলোচনাসভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র।
এ যেন এক ‘অন্য’ বিশ্বভারতী।
বিশ্বভারতীতে বক্তৃতা হচ্ছে। এবং তাতে শামিল দুই বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, অমর্ত্য সেন ও প্রভাত পট্টনায়ক। নোবেলজয়ী অমর্ত্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে। প্রভাত সশরীর। জমি বিবাদের দীর্ঘ পর্ব পেরিয়ে, গত কয়েক বছর ধরে প্রাক্তন উপাচার্যের সঙ্গে চলতে থাকা তিক্ততা কাটিয়ে বুধবার বিশ্বভারতীর অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগের আমন্ত্রণে ‘দ্বিতীয় অশোক রুদ্র স্মারক বক্তৃতা’য় যোগ দেন অমর্ত্য। মূল বক্তা ছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়ক।
২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় অশোক রুদ্র স্মারক বক্তৃতা দিতেই বিশ্বভারতীতে আসার কথা ছিল প্রভাতের। তার ঠিক আগে সিএএ-র পক্ষে বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তের একটি আলোচনাসভা ঘিরে ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্বভারতী। দাবি, এর পরে প্রভাতের বক্তৃতার কথা থাকলেও কোনও কারণ না-জানিয়েই তা বাতিল করে দেন তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। দীর্ঘ চার বছর পরে এ দিন সেই বক্তৃতা দিতেই প্রভাত বিশ্বভারতীতে আসায় খুশি অমর্ত্যও। তিনি বলেন, “এই ধরনের আলোচনা খুব আবশ্যক। শান্তিনিকেতনে প্রভাত পট্টনায়ককে স্বাগত। তাঁকে দেখে খুব ভাল লাগছে।’’
বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সময়েই শান্তিনিকেতনের প্রতীচী বাড়ির ১৩ ডেসিমাল জমি খালি করার জন্য উচ্ছেদ নোটিস দেওয়া হয়েছিল অমর্ত্যকে। জমি বিতর্কে বারবার অমর্ত্যকে আক্রমণ করেছেন বিদ্যুৎ। তার জেরে বিশ্বভারতীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তাঁর। তবে, বিদ্যুৎ অবসর নেওয়ার পরে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয়কুমার মল্লিকের কার্যকালে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। সম্প্রতি জমি মামলার নিষ্পত্তিও ঘটেছে আদালতে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বভারতীর আমন্ত্রণে সাড়া দিলেন নোবেলজয়ী। শান্তিনিকেতন নিয়ে তাঁর আবেগ আরও এক বার প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘শান্তিনিকেতনে সেই নব্বই বছর আগে জন্মেছি। সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই।’’
অমর্ত্য এ দিন নাম না করে বিদ্যুতের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রভাত পট্টনায়কের মতো মানুষকে শান্তিনিকেতনে স্বাগত জানানোটা আমার কাছে বিশেষ গর্বের বিষয়, শান্তিনিকেতন একটি অসাধারণ শহর। যদিও উপাচার্যেরা এবং আরও অনেকে এই বিষয়টিকে সে-ভাবে স্বীকৃতি দিতে চান না।”
‘নব্য উদারনৈতিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য’ শীর্ষক বিষয়ে এ দিন বক্তব্য পেশ করেন প্রভাত। বক্তৃতায় তিনি জানান, জিডিপি-র বৃদ্ধি হলেও কর্মসংস্থানের অভাব চিন্তার বিষয়। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের নোটবন্দি এবং পরিকল্পনাহীন ভাবে জিএসটি চালুর ফলে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উৎপাদন ক্ষেত্রে সঙ্কট ডেকে এনেছিল। যার সঙ্গে যুক্ত হয় বিশ্বব্যাপী সঙ্কটও।’’