গরুমারা থেকে শুরু করে জলদাপাড়ায় শেষ। মাঝে ময়নাগুড়ি বাইপাস হয়ে চ্যাংরাবান্ধা থেকে সীমান্ত বরাবর রাস্তা দিয়ে সোজা তিনবিঘা সীমান্ত। সেখানে সামরিক বাহিনীর ফ্ল্যাগ ডাউন দেখে সেখানেই রাত্রিবাস। সন্ধ্যায় স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্বাদ। সকালে তিস্তার পাড়ে দুটি ‘ভিউ পয়েন্ট’ এ গিয়ে প্রাতঃরাশ। সেখান থেকে রওনা হয়ে শীতলখুচির কামতেশ্বর ইকো ট্যুরিজ়ম পার্ক দর্শন। মানসাই নদীতে নৌকা বিহার। মাঝে দুপুরের খাওয়া সেরে, রাজার শহর কোচবিহার। শহর ঘুরে পুরনো স্থাপত্য দর্শন করে মধুপুর ধাম হয়ে নল রাজার গড়। শেষে জলদাপাড়া। এভাবেই ডুয়ার্সগামী পর্যকদের জন্য নতুন বিকল্প রুট খুলে দিতে চাইছে উত্তরের পর্যটন বিজ্ঞানীরা। এই উদ্দেশ্যে সীমা সুরক্ষা বল (বিএসএফ)-এর কর্তাদের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত ছাড়পত্র আদায় করতে সম্প্রতি বৈঠক করলেন মেখলিগঞ্জ ও শীতলখুচির বিডিও ও মূল উদ্যোগী অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজ়ারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম (অ্যাক্ট) এর কর্ণধার রাজ বসু। এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হলে ডুয়ার্সের পর্যটন আরও আকর্ষণীয় হবে বলে মনে করছেন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনও।
ডুয়ার্সের প্রধান দুটি পর্যটন কেন্দ্র গরুমারা এবং জলদাপাড়ার সঙ্গে সীমান্ত দর্শনকে জুড়ে দিতে তৎপর হয়েছেন উত্তরের পর্যটন বিজ্ঞানীরা। পুজোর আগেই যাতে এই ব্যবস্থা চালু করা যায় তার জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে, বিভিন্ন দফতর, বিএসএফের সঙ্গে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক কথাবার্তা হয়ে গিয়েছে। এমনকী জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা প্রাথমিকভাবে এলাকায় পর্যটনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে এলাকা পরিদর্শনও করেছেন। খুব শীঘ্রই কোচবিহারের জেলা শাসক এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বৈঠক বসার আহ্বান জানিয়েছেন বলে দাবি করেন রাজবাবু। তিনি বলেন, “মূলত গরুমারা এবং জলদাপাড়ার পর্যটকদের জন্য সীমান্ত পরিদর্শন ও ফ্ল্যাগ ডাউন দেখার ব্যবস্থা করা গেলে এটা পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করবে। এ নিয়ে সশস্ত্র সীমা বল (বিএসএএফ) এর কর্তাদের সঙ্গে সম্মতি নেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই বাকি ব্যবস্থা করে ফেলা হবে। আশা করছি পুজোর মধ্যেই নতুন রুট চূড়ান্ত হয়ে যাবে।” এ বিষয়ে বিএসএফের ডিআইজি গজেন্দ্র সিংহ এই ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে কথা হয়েছে জেলা প্রশাসনের। এতে স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। এতে বিএসএফের পক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।” শীতলখুচির বিডিও সুধাংশু পাইক জানান, এলাকায় ইকো ট্যুরিজ়ম চালু করতে প্রস্তাব এসেছে। সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে এলাকা ঘুরে দেখা হয়েছে। সেটা নিয়ে জেলা প্রশাসনকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকাকে কীভাবে তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া কী করা যায় তা জেলাশাসক দেখবেন। উদ্যোগ ফলপ্রসূ হলে তা ডুয়ার্সের পর্যটনের ক্ষেত্রে বিকল্প স্বাদের সন্ধান দেবে বলে মনে করছেন প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যসোসিয়েশন (পাটা)-র ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল সদস্য সম্রাট সান্যাল। তিনি বলেন, “জঙ্গল, ইতিহাস আর সীমান্ত পুরোটাই একটি রুটে নিয়ে আসা হলে তাতে শুধু আকর্ষণ বাড়বে তাই নয়, অন্য স্বাদের পর্যটকদেরও উৎসাহিত করবে এই রুটে আসতে।” এর সঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয়কে জুড়ে দিয়ে পর্যটনকে আলাদা মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকার বিভিন্ন দেবত্র ট্রাস্ট, মন্দির কমিটির কাছে অনুরোধ করা হয়, বিভিন্ন পুজোর সময়ে যদি পর্যটকদের জন্য প্রসাদ ভোগের ব্যবস্থা করা গেলে তা বাড়তি মাত্রা যোগ করবে বলে রাজবাবু মনে করছেন।