ফাইল চিত্র।
তথ্য গোপন করেছিলেন। পেয়েছিলেন কৃষক সম্মাননিধির টাকা। কেন্দ্রের অনুসন্ধানে হল পর্দাফাঁস। চাকরি-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তেই দোষ স্বীকার করছেন সরকারি কর্মচারী, পেনশন প্রাপক, আয়করদাতাদের একাংশ। প্রকল্প থেকে অব্যাহতি চেয়ে টাকা ফেরত দেওয়ায় শুরু হয়েছে তোড়জোড়।
প্রশ্ন উঠছে, কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল। রাজ্য কৃষি দফতরের কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, এই প্রকল্পে উপভোক্তাদের স্বঘোষণায় জোর দেওয়া হয়। প্রকল্পে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই যাতে উপভোক্তাদের দেওয়া নথিপত্র খতিয়ে দেখা যায়। পটাশপুর-২-এর সহ কৃষি আধিকারিক সৌরভ কুমার মাইতি বলেন, ‘‘ব্লকে আধার কার্ডের তথ্য যাচাইয়ের কোনও পদ্ধতি নেই। ফলে কারা সরকারি চাকরি করেন ও আয়কর দেন সেই বিষয়টি জানা সম্ভব হয়নি।’’ নিয়ম হল, উপভোক্তাকে ব্যক্তিগত ভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। পরে বিভিন্ন নথির প্রতিলিপি জমা দিতে হয় ব্লক কৃষি অফিসে। সঙ্গে দিতে হয় স্বঘোষণাপত্র। সেই ঘোষণাপত্রে উপভোক্তা জানান, তিনি পরিবারের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে এই প্রকল্পে আবেদন করছেন। তিনি সরকারি চাকরি করেন না (ব্যতিক্রম চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী)। তিনি আয়করদাতা নয়। অথবা ১০ হাজার টাকার উপরে পেনশনও পান না। উপভোক্তার তথ্য ব্লক, জেলা, হয়ে রাজ্যে পৌঁছয়। রাজ্য পোর্টালে তথ্য আপলোড করে। পরে কেন্দ্র থেকে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকে।
প্রকৃত উপভোক্তারা কি টাকা পাচ্ছেন? কেন্দ্র সম্প্রতি তা খতিয়ে দেখতে শুরু করে। তখনই ধরা পড়ে গরমিল। দেখা যায়, সরকারি কর্মচারী, আয়করদাতাদের অনেকেই কৃষক সম্মাননিধির টাকা পেয়েছেন। কয়েকজনকে চিহ্নিত করে সেই তালিকা কেন্দ্র পাঠাতে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যকে। রাজ্য থেকে ব্লক স্তরে পৌঁছয় সেই তালিকা। পটাশপুর-২ ব্লকে মোট ৪২ জন সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগী এই তালিকাভুক্ত রয়েছেন। এগরা-১ ব্লকে রয়েছে ৭১ জন। তথ্য গোপন করে প্রকল্পে টাকা নেওয়ায় সরকারি
চাকরিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে এই সব উপভোক্তাদের। কোথাও তাদের ব্যাঙ্কের ঋণ আটকে যাচ্ছে। কোথাও বেতন বন্ধের মতো সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেকে প্রকল্পে থেকে অব্যাহতি চেয়ে ব্লক সহ কৃষি দফতরে আবেদন জানিয়েছেন। এক পেনশনভোগী সত্যরঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘ভুলবসত এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত হয়ে যাওয়ায় আমার অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে। প্রকল্পে নাম থাকায় পেনশনের টাকা পেতে সমস্যা পড়েছি। টাকা ফেরত দিতে কৃষি দফতরে আবেদন জানিয়েছি।’’ সৌরভ বলেন, ‘‘সরকারি এই টাকা ব্যাঙ্কে ফেরত দেওয়া যাবে।’’
টাকা ফেরাতে হলে উপভোক্তাকে প্রথমে ব্লক সহ কৃষি দফতরে আবেদন জানাতে হবে। কৃষি আধিকারিক আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট আবেদনৃকারীকে একটি কোড নম্বর দেবে। সেই কোড নম্বরের ভিত্তিতে আবেদনকারী স্টেট ব্যাঙ্কে গিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পোর্টালে সরাসরি টাকা ফেরত দিতে পারবেন। গত এক সপ্তাহ ধরে কেন্দ্রীয় সরকার এই সুবিধা চালু করেছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, পটাশপুর ২ ব্লকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনজন ইতিমধ্যে টাকা ফেরত দিয়েছেন। আরও পাঁচজন টাকা ফেরতের আবেদন করেছেন।
কেন্দ্রের বক্তব্য, আবেদনের সময় নথি খতিয়ে দেখার কথা রাজ্যেরই। কিন্তু রাজ্য তা মানতে নারাজ। পরিকাঠামোর প্রসঙ্গ সামনে আনছে তারা। সঙ্গে প্রশ্ন তুলছে, কেন্দ্র টাকা দেওয়ার পর তথ্য খতিয়ে দেখছে, কিন্তু এ কাজটা আগে করলে তো জটিলতা এড়ানো যেত। চাপানউতোর চলছে। তবে পরবর্তী সময়ে জটিলতা এড়াতে শুরু হয়েছে নয়া ব্যবস্থা। এখন গ্রাম পঞ্চায়েতে উপভোক্তাদের আবেদনপত্রের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। প্রধানের স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র ব্লক কৃষি দফতরে জমা নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কারা সরকারি কর্মী ও আয়কর দাতা প্রাথমিকভাবে গ্রাম পঞ্চায়েত তা জানতে পারছে।