—ফাইল চিত্র
স্বাস্থ্যসাথীকে ‘নো রিফিউজ়াল’ প্রকল্প হিসেবে দেখার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্নের নির্দেশ, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে কেউ চিকিৎসা করাতে গেলে ফেরানো যাবে না। পরিষেবা দিতেই হবে।
‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে প্রায় ৬০ লক্ষ পরিবার নতুন করে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখন দু’কোটি পরিবারের অন্তত সাড়ে ন’কোটি মানুষের বছরে পাঁচ লক্ষ টাকার বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা। কিন্তু অনেক বেসরকারি নার্সিংহোম, হাসপাতালেই স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডে চিকিৎসা না-করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। সেই সমস্যা এড়াতেই মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম শনিবার রাজ্যের সব কর্পোরেট, বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানেই স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে নবান্নের নির্দেশ স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে কলকাতার কর্পোরেট হাসপাতালগুলির তরফে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সুরাহা চাওয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলির বক্তব্য, তাদের সংস্থার পরিকাঠামো মূলত জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সেই পরিকাঠামো তৈরি করতে খরচও হয়েছে অনেক। তাই সেই পরিষেবার মূল্যও তুলনায় বেশি। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য যে-মূল্য ধার্য হয়েছে, তা খুবই কম। তাতে কলকাতার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া কঠিন। তাই সরকার কলকাতার হাসপাতালগুলির জন্য প্যাকেজের মূল্য বাড়াক। বেসরকারি হাসপাতালগুলির আরও দাবি, এখন রাজ্যের সব পরিবারেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা করাতেও মানুষ কলকাতার কর্পোরেট হাসপাতালে চলে আসছেন। ওই কার্ড নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে যে-ভিড় হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে তা সরকারি হাসপাতালকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকার কলকাতার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শুধু জটিল রোগীকেই স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।
কর্পোরেট হাসপাতালের বক্তব্য জেনে সরকারি কর্তারা ভবিষ্যতে নীতি তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আপাতত স্বাস্থ্যসাথী কার্ডধারী কোনও রোগীকেই যে ফেরানো যাবে না এবং প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালেই যে হেল্প ডেস্ক চালু করতে হবে— তা পরিষ্কার করে দিয়েছে নবান্ন।
কলকাতার হাসাপাতাল ছাড়াও জেলার প্রায় ১১০০ নার্সিংহোম, ছোট হাসপাতালের মালিকদের সঙ্গেও বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিব। তাঁদেরও বলে দেওয়া হয়েছে, কোনও ভাবেই স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডধারীদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। নার্সিংহোমগুলিকে পরিকাঠামো বাড়ানোর নতুন প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। নার্সিংহোমগুলি যদি শয্যা-সংখ্যা বাড়াতে চায়, তা হলে সরকার উদার নীতি নিয়ে সেই পরিকাঠামো বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ভিত্তিতে চিকিৎসা দিয়ে টাকা পাওয়া যাবে না বলে যে-ধারণা তৈরি হয়েছে, তা ঠিক নয়। সরকারের হাতে টাকা রয়েছে। এক মাসের মধ্যেই টাকা মিটিয়ে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থা ও সরকার।