বন্ধ হয়েও সিপিএমে খোলা রইল জোট-জল্পনা

শেষ হয়েও যেন হইল না শেষ! বন্ধ হয়েও কোথাও যেন আবার দরজায় ফাঁক থেকে গেল! কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের নিবার্চনী সমঝোতায় যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই বলে দাবি করছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০৩:৩৫
Share:

শেষ হয়েও যেন হইল না শেষ! বন্ধ হয়েও কোথাও যেন আবার দরজায় ফাঁক থেকে গেল!

Advertisement

কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের নিবার্চনী সমঝোতায় যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই বলে দাবি করছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। সোমবার দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির পরে মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্তই তাঁদের কাছে চূড়ান্ত। কংগ্রেসের আর্থিক উদারনীতি এবং বিজেপির সাম্প্রদায়িকতা, দু’টোর বিরুদ্ধেই তাঁদের প্রাণপণ লড়াই চলবে। কিন্তু দলের ভিতরে এখনও বহাল থাকছে কংগ্রেস-প্রশ্নে বিতর্কের স্রোত। এবং আগামী নভেম্বরে কলকাতায় দলের সাংগঠনিক প্লেনামেও সেই বিতর্কের জোরালো স্রোত ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে!

দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যে বিতর্কে জল ঢেলে দেওয়ার পরেও কেন ফের বিতর্ক? কারণ, দলের অন্দরে শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য নিয়ে দলের একাংশের মধ্যেই জল্পনা! আলিমুদ্দিনে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে অধিকাংশ নেতাই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেবের মন্তব্যের প্রবল সমালোচনা করেছেন। পক্ষে দাঁড়িয়েছেন অল্প কয়েক জন। বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে এ দিন যেমন নেপালদেব ভট্টাচার্য, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়েরা নির্বাচনে নমনীয় অবস্থান নেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেছেন। কিন্তু তার পরে জবাবি ভাষণে সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি প্রথমে পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত ও পরে সংগঠনের ফাঁকফোকর বোজাতে কলকাতায় প্লেনামের কথা বলেছেন। তার সঙ্গেই মন্তব্য করেছেন, নির্বাচনের এখন দেরি আছে। নির্বাচনী কৌশল নিয়ে পরে আলোচনার সময় আছে। আর এই মন্তব্যের ফাঁকেই কোথাও আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছেন দলের কেউ কেউ!

Advertisement

সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘সাধারণ সম্পাদক বুঝিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনের কৌশল নিয়ে দল যথাসময়ে আলোচনা করবে। তার মানে কোনও সম্ভাবনাই তো একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না। হতেই পারে, পরিস্থিতির প্রয়োজনে কলকাতা প্লেনামেই এই নিয়ে আলোচনার জন্য কিছু সময় বার করা হল!’’ সাধারণ সম্পাদক এ ভাবে সম্ভাবনার ফাঁক রেখে দেওয়ার জন্য এ দিন রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন গৌতমের জেলার নেতা নেপালদেব। যাঁর কথায় এত বিতর্কের সূত্রপাত, সেই গৌতমবাবু অবশ্য শরীরের কারণ দেখিয়ে এ দিন আর আলিমুদ্দিনে আসেননি।

ইয়েচুরি সম্ভাবনার মারপ্যাঁচ রেখে দেওয়ার আগে অবশ্য নিজের জেলার সম্পাদকের হয়ে রাজ্য কমিটিটে রীতিমতো নাটকীয় বক্তৃতা করেছেন নেপালদেব। আলিমুদ্দিনে এ দিন তিনি এসেছিলেন গৌতমবাবুর সেই সাংবাদিক সম্মেলনের সিডি হাতে করে। সিডি হাতে ধরেই তাঁর প্রথম দাবি, গৌতমবাবু আদৌ কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সওয়াল করেননি। যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা নেহাতই সংবাদমাধ্যম দেখে করছেন। তিনি ভুল বলে থাকলে সিডি দেখে নেওয়ার চ্যালেঞ্জও করেছেন নেপালদেব। এবং তার পরেই টেনে এনেছেন ইতিহাসকে!

গৌতমবাবুর মন্তব্যের পরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী বলেছিলেন, হাজারদুয়ারির মতো হাজারটা সম্ভাবনার দরজা খোলা আছে ভোটের সমীকরণের জন্য। তারই সূত্র ধরে দলীয় সতীর্থদের কাছে এ দিন নেপালদেবের সওয়াল, হাজারদুয়ারির একটা দরজা খুললে তাঁরা দেখতে পাবেন, জাপানি সাম্রাজ্যবাদের মোকাবিলায় চিনের কমিউনিস্ট পার্টি চিয়াং কাই শেকের মতো সামরিক নায়কের সঙ্গে বসেছে। আর একটা দরজা খুলে দেখা যাবে, হিটলারের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি করছেন রুশ দেশের স্তালিন। আরও একটা দরজা খুললে দেখবেন, বাংলা কংগ্রেসের অজয় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে চেয়ার ভাগ করে নিচ্ছেন সিপিএমের জ্যোতি বসু। আবার আরও একটা দরজা খুললে এটাও দেখা যাবে, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে প্রাতরাশ সারতে সারতে আলোচনা করছেন প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি! নেপালদেবের সওয়াল, ইতিহাসে কত কিছুই হয়! আর সংসদীয় গণতন্ত্রে সব দলই নানা কৌশল করে ভোটে জিততে চাইবে, এটাই তো স্বাভাবিক!

নদিয়ার মেঘলাল শেখের মতো কিছু নেতা এ দিনও বৈঠকে বলেছেন, পার্টি কংগ্রেসে বিতর্কের সময়েই তো এ সব যুক্তি দেওয়া যেত! এখন বলে কী লাভ? কিন্তু কৌশলী বক্তব্যে তাঁদের পিছনে ফেলে দিয়েছে নেপালদেব। আর তিনি ও’কথা বলেলনি বলে গৌতমবাবুর দাবি-সংবলিত চিঠি পড়ে দিয়ে জবাবি বক্তৃতায় সূর্যবাবু বলেছেন, বিতর্কে জল ঢেলে দেওয়াই তাঁদের কাজ!

পরে প্রকাশ্যেও সূর্যবাবু বলেছেন, ‘কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাতেরও কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’ বামেরাই তৃণমূলকে হারাতে সক্ষম বলে দাবি করে সূর্যবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘এখনও শক্তির ভিত্তিতে শাসক দল কিছুটা এগিয়ে। কিন্তু ওরা দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। বামফ্রন্টের বাইরে থাকা বাম মনোভাবাপন্ন বিভিন্ন গোষ্ঠী, ছাত্র-যুব-মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’’ শ্যামলবাবুও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সওয়াল করেননি বলে দলকে জানিয়েছেন, এমনই জানান সূর্যবাবু।

সূর্যবাবুরা চাইছেন এই বিতর্কে সময় নষ্ট না করে আন্দোলনের পথে কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে। তাই জেলায় জেলায় থানা ঘেরাও অভিযান, কৃষক সভার তরফে ‘নবান্ন অভিযানে’র ডাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে ডাকে জোট-জল্পনা চাপা পড়লে তো!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement