—প্রতীকী চিত্র।
কোথাও স্কুল-পরিদর্শকের সই নকল, কোথাও যোগসাজশ। তা করেই স্কুলের জমি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এবং খোদ শিক্ষায় আগুয়ান জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে। একটি অভিযোগ উঠেছে রামনগরে, অন্যটি পটাশপুরে।
পটাশপুর-১ ব্লকের অমর্ষি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত একটি স্কুলের ৩০ ডেসিমাল জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। রামনগর-১ ব্লকের হলদিয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সাদী রাজেন্দ্র নারায়ণ হাই স্কুলের ১৭ ডেসিমাল জমিও স্থানীয় এক বাসিন্দাকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্কুল পরিদর্শকের সই নকলের অভিযোগও রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, দিঘা চক্রের স্কুল ইন্সপেক্টর কৃষ্ণেন্দু পালের সই নকল করে অর্জুনি মৌজায় স্কুলের ১৭ ডেসিমাল জমি ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন সাদী রাজেন্দ্র নারায়ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোককুমার মণ্ডল। এ নিয়ে জেলার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শুভাশিস মৈত্র-সহ প্রশাসনের নানাস্তরে লিখিত অভিযোগ জানান পরিচালন কমিটির এক সদস্য। তদন্তে নেমে ওই স্কুলের প্রাক্তন প্রশাসক তথা স্কুল পরিদর্শক দেখেন, জমি রেজিস্ট্রির সময় তাঁর সই নকল করা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে শো-কজ় করা হয়। তিনি জবাবে কারচুপির কথা লিখিত ভাবে স্বীকারও করেছেন।
সম্প্রতি স্কুলের জমি ফেরাতে অভিভাবকের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে স্থানীয় বিধায়ক অখিল গিরির উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়, ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। দাবি, সময়সীমা পেরলেও জমি ফেরত হয়নি। অখিল বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষককে জমি ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে।’’ অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আলোচনা
স্তরে রয়েছে।’’
অভিযোগ, পটাশপুরের একটি স্কুলের ৩০ ডেসিমাল জমি স্থানীয় রাজকুমার মাইতি ও গৌতম মাইতিকে বিক্রি করা হয়েছে ২০১৩ সালে। অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের নামেই। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানির পরে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি দেবব্রত বিজুলি ৩১ জুলাই পটাশপুর থানায় অভিযোগ করেন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-সহ শিক্ষা দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদেরও লিখিত ভাবে সবটা জানানো হয়েছে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের দু’টি মোবাইলই বন্ধ। এলাকার বিধায়ক তথা জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিকের দাবি, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না।’’ বিজেপির কাঁথি জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের খোঁচা, ‘‘একের পর এক দুর্নীতি করে রাজ্যে অপরাধীরা পার পেয়ে গিয়েছেন। তাই উৎসাহিত হয়ে প্রধান শিক্ষকেরাও কোথাও কোথাও
এ সব ঘটাচ্ছেন।’’
২০২২ সালে রাজ্যের বহু স্কুলে পরিচালন সমিতি গঠিত হয়েছে। তার আগে দীর্ঘ কয়েক বছর স্কুলগুলিতে পরিদর্শকদের প্রশাসক এবং প্রধান শিক্ষককে পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই পর্বেই বহু স্কুলে নানা দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। নতুন পরিচালন সমিতি হওয়ার পর সে সব সামনে আসছে। পূর্ব মেদিনীপুরের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শুভাশিস মৈত্র বলেন, ‘‘দু’টি স্কুলেরই অভিযোগ এসেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুল পরিদর্শকদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। আমরাও পদক্ষেপের কথা ভাবছি।’’